দেশ, সমাজ ও রাজনীতিকে কেন্দ্র করে কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদের এই প্রবন্ধগুচ্ছ তাঁর চিন্তাভাবনার অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী ভাষ্য। বক্তব্যকে শানিত ও বোধগম্য করতে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ও যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্লেষণ পাঠককে যেমন অভিনিবেশী পাঠে অনুপ্রাণিত করবে, তেমনি অনেক বিষয়ে নতুন চিন্তারও খোরাক জোগাবে বলে আশা করা যায় । বইয়ের নাম প্রগতিশীলতার ইচ্ছাপূরণ । এখানে সামাজিক, রাজনৈতিক ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজে প্ৰগতি ভাবনার গুরুত্বকে যেমন বিচার করা হয়েছে, তেমনি ব্যবহারিক জীবনে ইচ্ছাপূরণের মতো ভাবাবেগসর্বস্ব মানসিকতা যে এর চর্চাকে নিরুৎসাহিত করছে, এমনকি বিপথে চালিত করছে তার ওপর বিস্তৃত আলোকপাত করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদ, সভ্যতার সংঘর্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী আত্মপরিচিতি, গরিষ্ঠতাবাদ, সাতচল্লিশের দেশভাগ প্রভৃতি বিষয়ে গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলো পাঠকের মনোযোগের দাবিদার। সাহিত্য বা শিল্পকলার বাইরে একজন সৃষ্টিশীল মানুষের এমন প্রবন্ধের সংকলন আমাদের জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতি নির্মাণের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মননশীল লেখক সমাজ-সংস্কৃতির জ্ঞানগত বিষয়গুলো অনুধাবনে তৎপর থাকে, হৃদয়বৃত্তি অনেকাংশে আড়ালে চলে যায় । সৃষ্টিশীল ব্যক্তি মনোজগতের খোঁজটাও রাখতে উৎসাহী থাকেন। ওয়াসি আহমেদের প্রবন্ধে এই উভয় দিকের সম্মিলন রয়েছে। ফলে প্রবন্ধগুলো যেমন সুখপাঠ্য, অন্যদিকে এই সংকলন একজন আত্মনিষ্ঠ সৃষ্টিশীল কথাসাহিত্যিকের নতুন পরিচয়ও।
জন্ম : ৩১ অক্টোবর, ১৯৫৪ সিলেট শহরের নাইওরপুলে। স্কুলের পাঠ বৃহত্তর সিলেটের নানা জায়গায়। পরবর্তী শিক্ষাজীবন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কবিতা দিয়ে লেখালেখির শুরু। ছাত্রাবস্থায় প্রকাশিত কবিতাসংকলন ‘শবযাত্রী স্বজন’। কথাসাহিত্যে, বিশেষত গল্পে, মনোনিবেশ আশির দশকে। প্রথম গল্প সংকলন ‘ছায়াদণ্ডি ও অন্যান্য’ (১৯৯২)। পুস্তকাকারে প্রথম উপন্যাস ‘মেঘপাহাড়’ (২০০০)। সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে বিদেশে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনসহ কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নানা অঙ্গনে। বর্তমানে একটি ইংরেজি দৈনিকে সম্পাদকীয় বিভাগে কর্মরত। লেখালেখির স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ দেশের প্রায় সব প্রধান সাহিত্যপুরস্কার। তাঁর গল্প ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।