জন্ম থেকেই আমরা জীবন-জগতের বহুমাত্রিক উপস্থিতির মধ্যে বিচরণ করি, কিন্তু সে সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারি না। এমনকি অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান আমাদেরকে সেই বহুমাত্রিক উপলব্ধির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলেও মনে উদয় হয় হাজারো জিজ্ঞাসা। জগদ্বিখ্যাত সুফি সাধক মওলানা জালালউদ্দিন রুমী (রহ.) জীবন জগতের সেই বহুমাত্রিকতা উপলব্ধির জন্য কিছু পথ-পন্থা নির্দেশ করেছেন। মানুষের প্রতি তাঁর আহবান-- মনের সকল দ্বিধা বিভক্তি ক্ষুদ্রতা সীমাবদ্ধতা ঘুচিয়ে মহাসত্তার সমীপবর্তী হও। কারণ সৃষ্টি জগত থেকে কেউ নিজেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন ভাবলে তার পক্ষে মানব সত্তার মৌলিক প্রকৃতি বা রহস্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব নয়। রুমি তাই প্রেমের মত সংবেদনশীল অনুভূতির মাধ্যমে সৃষ্টি জগতের সাথে সংযুক্ত হবার আহ্বান জানিয়েছেন মানুষকে। আর সে প্রেমের বীজ বপনের জন্য অন্তরাত্মাকে করতে বলেছেন কর্ষিত, প্রশিক্ষিত --যার ফলে মানুষ মানবীয় গুনাগুণে সমৃদ্ধ হবে এবং শেষ পর্যন্ত নিজের সাথে মহাবিশ্বের সংযুক্তি অনুভব করতে পারবে। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই রুমি মানুষকে তার ভেতরের ঐশ^রিক সত্তা জাগিয়ে তুলতে উৎসাহিত করেছেন। রুমির মতে-- মানবিক বোধকে ব্যক্তি জীবনে প্রয়োগ করতে হলে প্রেম নামক অন্তর্নিহিত শক্তির প্রস্ফুটন প্রয়োজন। এই জন্য যে প্রেম-ভালোবাসার অনুভূতি ব্যক্তিকে চরম পাশবিকতা থেকে বিরত রাখে এবং প্রবৃত্তির উদ্দাম তাড়নায় নিয়ে আসে একরকম শিথিলতা। তাই রুমির কাব্যচর্চার বিশাল পটভূমি ঐশ্বরিক অনুভূতি ও মানবিক প্রেমের আলাপনে সমৃদ্ধ। প্রেমই হোক আমাদের আরাধ্য, প্রেমই হোক মানবীয় গুনাগুনের কেন্দ্রবিন্দু।