সুশিক্ষিত জাতি গঠনে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত শিক্ষাক্রম। ভূমিষ্ঠ হওয়া একজন শিশুকে ‘মানুষ’ বানায় শিক্ষা। মানুষরূপে জন্ম নেওয়া সহজ কিন্তু ‘প্রকৃত মানুষ’ হওয়া কঠিন কাজ। এখানেই রয়েছে শিক্ষা ও শিক্ষাক্রমের ভূমিকা। ২০১২ সালে প্রণয়নকৃত জাতীয় শিক্ষাক্রম সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বর্তমান সরকার ২০১৭ সাল থেকেই শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১’ প্রণয়ন করে সেটি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য ডেভিড এ কব (উধারফ অ কড়ষন)-এর অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন তত্ত্বকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এর নাম দেওয়া হয় ‘যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম’। এখানে যোগ্যতা বলতে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে বোঝানো হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার পরিবর্তন নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার রূপান্তরকরণ হয়েছে। এ শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক, পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করায় অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা প্রবন্ধ ও বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু ঘোর কাটছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সময়ের শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক ও ভ্রামণিক ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ সকল প্রবন্ধ সংগ্রহ করে এবং নিজের লেখা সংযোজন করে আলোচ্যগ্রন্থ নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন : অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা ও বাস্তবতা সংকলন করেছেন। এই সংকলনে মোট ৩৭টি প্রবন্ধ রয়েছে যার মধ্যে ২৬টি বাংলা এবং ১১টি ইংরেজি ভাষার যেগুলো সমসাময়িক ও খুবই প্রাসঙ্গিক। এ সকল প্রবন্ধ পাঠ করে শিক্ষকরা সম্যক ধারণা লাভে সক্ষম হবেন, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্, জন্ম ০১ আগস্ট ১৯৬৯, কুতুবপুর, শিবচর, মাদারীপুরে। স্বনামধন্য চিকিৎসক পিতা ডা. মমিন উদ্দিন আহমেদ এবং মা রহিমা বেগমের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। পেশা অধ্যাপনা। বর্তমানে তিনি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। একজন শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে দেশব্যাপী সুখ্যাতি থাকলেও ভালো লাগে নজরুলের দুরন্তপনা, শরৎচন্দ্রের বোহেমিয়ান জীবন, বুদ্ধদেবের নিসর্গ আর সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশ ভ্রমণ। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশসহ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মধ্যরাতের সুনসান নিরবতা আকর্ষণ করে প্রবলভাবে, খরতাপে ভিজতে ভালো লাগে, পাহাড়ের উচ্চতা আশা জাগায়, সমুদ্রের গভীরতা ভাবতে শেখায়। নদী-নারী-প্রকৃতি এ নিয়ে তাঁর কৃতি। মানব-মন, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, প্রেম, ঈর্ষা আর আশা এ সবের প্রতি নিগূঢ় ভালোবাসা। নানা ধরনের রচনার সংখ্যা প্রায় ৪০টি। ১৯৯৬ সাল থেকে একাডেমিক গ্রন্থ রচনায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁর বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্বদ্যিালয় ও সরকারের টিকিউআই প্রকল্প কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। মিতা ট্রেডার্স থেকে প্রকাশিত বিএড কর্মসূচির আলোচিত বইসমূহ হলো- ভূগোল শিক্ষণ, মাধ্যমিক শিক্ষা, শিখন-শেখানো দক্ষতা ও কৌশল, শিক্ষায় গবেষণা ইত্যাদি। আগামী প্রকাশনী থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় আলোচিত গল্পগ্রন্থ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এবং ২০০৭ সালে ইরাবতী। ২০১৯ সালে তাঁর আলোচিত ভ্রমণ কাহিনী ফিলিপাইন: রহস্যঘেরা এক মায়াবী দ্বীপরাষ্ট্র, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাসংক্রান্ত কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন, ২০২১ সালে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দশ রাজনীতিবিদ, ২০২২ সালে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও গারো পাহাড়ের খোঁজে (ভ্রমণ কাহিনি) আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।