এই গ্রন্থে বাংলাদেশের সেবা খাতসমূহে প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রকৃতি, আকার, ধরন, কারণ, মূল্য ও প্রতিকারের বিষয় অনুসন্ধান করা হয়েছে । ঢাকা মহানগরীতে বাংলাদেশ সরকারের ১০টি সেবা খাতে দুর্নীতির ওপর সমীক্ষা পরিচালনার সময় আচরণগত পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে । খাতগুলো ছিল: আইন প্রয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানি সরবরাহ, ব্যাংকিং সেবা, আয়কর সেবা, মূল্য সংযোজন কর, পৌরসেবা এবং ভূমি প্রশাসন । সরকারি খাতে প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণ, মূল্য ও প্রতিকারের বিষয়ে সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতাদের ধারণার ভিত্তিতে বইটিতে কিছু সুপারিশও প্রণয়ন করা হয়েছে । এর মধ্যে আছে: দুর্নীতি যেখানেই ঘটুক তা প্রতিরোধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অঙ্গীকার; দুর্নীতি নিবারণ এবং সরকারি সেবা তদারকিতে জনগণের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ; ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে যথাযথ আইন, নীতি, বিধি-বিধান ও পদ্ধতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন; দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধকরণ ও তাদের প্রণোদনা বৃদ্ধি; দুর্নীতির শিকার ব্যক্তিদের জন্য যথেষ্ট আইনগত ও প্রশাসনিক প্রতিকার নিশ্চিতকরণ; সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে দুর্নীতি হ্রাসে সরকার ও সুশীল সমাজের মধ্যে অংশীদারি স্থাপন; এবং নতুন সরকারি ব্যবস্থাপনা (নিউ পাবলিক ম্যানেজমেন্ট)-এর ধারণার সাথে সংগতি রেখে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের গঠন, কর্ম ও প্রবৃত্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন । জার্মানির বার্লিন-ভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা স্কলারস প্রেস ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে 'অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ করাপশান ইন বাংলাদেশ: এ বিহেভিওরাল স্টাডি' (বাংলাদেশে প্রশাসনিক দুর্নীতি: একটি আচরণগত সমীক্ষা) শিরোনামে লেখকের পিএইচডি অভিসন্দর্ভকে সর্বপ্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছিল । পরবর্তী সময়ে উল্লিখিত প্রকাশক এই একই গ্রন্থকে ইউরোপের আরও আটটি ভাষায় প্রকাশ করেছে । ভাষাগুলো ছিল: ইটালিয়ান, জার্মান, ডাচ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগিজ, পোলিশ, রাশিয়ান ও স্প্যানিশ । সেই হিসেবে বাংলায় রচিত এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে দশম ভাষায়, যা এ ক্ষেত্রে সম্ভবত একটি রেকর্ড ।
হেলাল উদ্দিন আহমেদ-এর জন্ম ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে ১৭ জুলাই ১৯৬০ সালে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান), ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে এমবিএ প্রােগ্রামে প্রথম স্থান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে এমফিল (সমমান) কোর্সে প্রথম স্থান, যুক্তরাজ্যের আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ থেকে জনপ্রশাসনে দুর্নীতিবিষয়ক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন । সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত অবস্থায় ২০১৬ সালের আগস্টে ত্রিশ বছরের সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা থেকে প্রকাশিত। সরকারি প্রকাশনা বাংলাদেশ কোয়ার্টারলি’ ও ‘নবারুণ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ ১৫টি।