বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানভিত্তিক ও গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে রচিত ‘দাম্পত্য কাউন্সেলিং’ বইটিকে কাপল কাউন্সেলিং-এর অঙ্গনে প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। লেখকদ্বয়ের এটি চতুর্থ প্রকাশনা। এর পূর্বেও লেখকদ্বয় মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তাদের কাউন্সেলিং চর্চার ওপর ভিত্তি করে মনোসেবা প্রদানকারীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি, শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে ভালো থেকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন বিষয়ে সুগ্রন্থিত বই প্রকাশ করেছেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কাপল কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক হলেও এ বিষয়ে দক্ষ মনোবিজ্ঞানী অথবা মনোসেবাপ্রদানকারীর অভাব রয়েছে। অধিকন্তু, অসংখ্য দম্পতি আবেগীয়, মানসিক, আর্থিক ও যৌনতা বিষয়ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যান। মানসিক দূরত্ব ও যৌন সমস্যার বিষয়গুলো আমাদের সমাজ ও কৃষ্টিগত কারণে প্রকাশ না করে সারা জীবন ধরে তারা ভুগতে থাকেন। লেখকদ্বয় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, সেক্স এডুকেশনের বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তাদের দীর্ঘদিনের পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে চমৎকার এই বইটি লিখেছেন। দাম্পত্যজীবনের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে, দাম্পত্যজীবনে পরস্পরের সাথে আলোচনা করার দক্ষতা তৈরি, ভালোবাসা প্রকাশ করে অন্তরঙ্গতা সম্পর্কিত প্রস্তুতি এই বিষয়গুলি অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় লেখকদ্বয় তুলে ধরেছেন।br সুখী বিবাহিত জীবন বজায় রাখার জন্য নীতিমালাগুলো চর্চার মাধ্যমে কীভাবে ভালো থাকা যায় সেটির ওপরে লেখকদ্বয় আলোচনা করেছেন। এই বিষয়গুলো একজন মনোবিজ্ঞানী/কাউন্সেলরকে তার কাছে আগত সেবা গ্রহণকারী দম্পতিদের পেশাগত সহায়তা করার কাজটি সহজ করে তুলবে বলে আমি আস্থাশীল। দাম্পত্যজীবনে অবিশ্বস্ততা বিবাহবিচ্ছেদের একটি বড় কারণ। বিবাহবিচ্ছেদের অন্যান্য কারণগুলোর পাশাপাশি লেখকদ্বয় এই বিষয়টির ওপরে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এখান থেকে বেরিয়ে আসার নানা উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। বিশেষ করে যে না বলা কথাগুলো তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা, সন্দেহ, রাগ, ক্ষোভ, বিষণ্ণতা তৈরি করে, নারী-পুরুষের সেই যৌনসমস্যাগুলো সম্পর্কে বইটিতে বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, শুধু সমস্যার মধ্যে লেখকদ্বয় সীমাবদ্ধ না থেকে বইটিতে উত্তরণের নানা বৈজ্ঞানিক কৌশল উপস্থাপন করেছেন। পরস্পরের চাহিদা বোঝার জন্য, নিজের এবং সঙ্গীর চাওয়ার মধ্যে সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন প্রশ্নমালা ও অনুশীলনী রয়েছে। এই বিষয়ে এই সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট অনুশীলনগুলো ‘দাম্পত্য কাউন্সেলিং’ বইটির মধ্যে একটি বিশেষ মাত্রা যুক্ত করেছে। এই বইটি একাধারে যেমন এই বিষয়ে একজন কাউন্সেলরের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে, সেই সাথে সাধারণ পাঠকবৃন্দ বইটি পড়ে নিজের দাম্পত্যজীবনে আলোচিত কৌশল ও টিপস্গুলি ব্যবহার করতে পারবেন। ‘দাম্পত্য কাউন্সেলিং’ বইটির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, প্রতিটি অধ্যায়ে বিষয়ভিত্তিক প্রচুর সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট প্রশ্নমালা, চেকলিস্ট ও অনুশীলনী দেওয়া আছে। প্রতিটি দম্পতি এগুলো অনুশীলন করে নিজের ও সঙ্গীর অবস্থানটি খুঁজে পাবেন যা তাদের পরস্পরকে বুঝে এই ব্যাপারে সচেতন হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সাহায্য করবে। আমি মনে করি, আমাদের দেশে এই ধরনের বইয়ের খুবই প্রয়োজন ছিল এবং সেই শূন্যতা পূরণে বইটি বিশাল ভূমিকা রাখবে। লেখকদ্বয় কাপল কাউন্সেলিংয়ের চাহিদা উপলব্ধি করে এই বই রচনার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশা অনেকটাই পূরণ করেছেন। প্রিয় সহকর্মী ড. লিপি গ্লোরিয়া রোজারিও ও প্রিয় শিক্ষার্থী জেমস্ শিমন দাসকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরুপ এই চমৎকার বইটি উপহার দেবার জন্য কৃতজ্ঞাতা ও সাধুবাদ জানাই। অভিনন্দন লেখকদ্বয়কে!