খাজা নাজিমুদ্দিন, আবদুল গণি, খাজা আহসানুল্লাহ ও খাজা সলিমুল্লাহর নাম এই তালিকায় আসেনি। তারা বাড়িতে ফার্সী ও উর্দুতেই কথা বলতেন এবং তারা কাশ্মির থেকে এসে ঢাকায় বসতি স্থাপন করেন। তারা বাঙালি হয়ে ওঠেননি। আবার হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর পরিবার অবাঙালি হলেও তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং বাংলায় কথা বলতেন। শচীন দেববর্মনের পূর্বপুরুষও এসেছেন ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লাতে। তাঁর জন্ম কুমিল্লায় এবং তিনি বাংলা বলতেন এবং অনুশীলন করতেন। এ কারণেই সোহরাওয়ার্দী ও শচীনকে বাঙালি হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে। ভূপেন হাজারিকা কিংবদন্তিতুল্য বাংলা গানের কণ্ঠশিল্পী হলেও তিনি মূলত অসমীয়া এবং আসামেই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শেষ জীবনে আসামেই রাজনীতিতে যুক্ত হন। বাঙালি বেশ কয়েকজন পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করলেও অভিনয় শিল্পীদের সেই দাপট তৈরি হয়নি। আন্তর্জাতিক খ্যাতি না পেলেও উত্তম কুমার ও সুচিত্র সেন এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম বলেই তালিকায় শুধু তারা দুজনই আছেন। তালিকায় যৌক্তিকভাবেই রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংগীতজ্ঞদের আধিক্য রয়েছে। বিজ্ঞান ও দর্শনে আমাদের অবদান খুব বেশি নয়। অর্থনীতিতে দুটি নোবেল পুরস্কার এসেছে এবং অনিবার্যভাবেই তাদের নাম এসেছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাফল্য কেবল ক্রিকেটে। তাই সেখানেই প্রাধান্য রয়েছে। বাংলায় ধর্মের ব্যাপক প্রভাব আদিকাল থেকেই বর্তমান তাই এখানেও আধিক্য রয়েছে।, অনেক ক্ষেত্রেই একই রকম কাজ একাধিক ব্যক্তি করলেও যিনি ধারার সূচনা করেছেন তাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে হাজী মুহম্মদ মহসীন ও রণদাপ্রসাদ সাহা দানবীর হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করায় তাদের দুজনকেই বেছে নিয়েছি। পাল রাজবংশের উৎস অজ্ঞাত বলেই গোপাল, ধর্মপাল ও দেবপাল বাঙালি কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। মাদার তেরেসা বাংলা রপ্ত করলেও তাঁকে বাঙালি বলা সম্ভব নয়। এ কারণেই তাদের নাম আসেনি। বাংলাদেশে শিল্পের বিকাশ শুরু হলেও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বের মধ্যে কেবল শিল্পপতি হিসেবে কাউকে আনা কঠিন। উন্নয়ন সংগঠক হিসেবে ফজলে হাসান আবেদ এসেছেন শত ব্যক্তিত্ব হিসেবে। ভাষাবিদ হিসেবে ড. শহিদুল্লাহর পরে হুমায়ুন আজাদকে বেছে নেয়ার কারণ তার সাহিত্য জগতে অবদান। এই তালিকার ব্যক্তিত্বকে আমার ব্যক্তিগত পছন্দানুযায়ী বাছাই করিনি। তাদের প্রভাব—প্রতিপত্তি বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে আমার ভিন্ন দর্শন ও রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের অনেক নামই অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে সারা দেশের জনগণের চোখ দিয়ে দেখেই। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ও অপছন্দকে বিবেচনা না করার বিষয়ে সচেষ্ট ছিলাম। ভিন্ন ঘরানার ও দর্শনের ব্যক্তিত্বকে নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকবেই। তালিকার ক্রমবিন্যাস নিয়েও আপত্তি থাকবে। আমার লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ বাঙালিদেরকে এক মলাটে নিয়ে আসা। মন চাইলেই তালিকাটা কেউ নিজের তালিকার সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।