বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া জেলখানা যেকোনো মানুষের জীবনেই অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও অনাকর্ষণীয় একটা জায়গা। অপরাধীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে শাস্তি দিতেই এখানে আটকে রাখা হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ অপরাধ করেন স্বেচ্ছায়, কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ শখের বসে, কেউ আবার বিনা দোষে জেল খাটেন বছরের পর বছর। জেলখানায় বন্দীদের জেলজীবনের আগে-পরের বিষয়ে আমরা কতটুকুই-বা জানি? ডা. সাবরিনা হুসেন মিষ্টি কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় করোনাকালে করোনাকালে প্রতারণার এক মামলায় তিন বছর জেল খেটেছেন। কারাগারে তাঁর জীবনের দীর্ঘ এই সময়ের অভিজ্ঞতা লেখার অক্ষরে ভিন্নরৈখিক অবয়বে চিত্রিত হয়েছে বন্দিনী গ্রন্থে। সেখানে নিজের দেখা অভিজ্ঞতা এবং তাঁর সাথের নারী বন্দীদের জেলজীবনের নেপথ্য আখ্যানে এ গ্রন্থ ঋদ্ধ হয়েছে বৈচিত্র্যময় সাহিত্য রসে। বাইরে থেকে দেখা জেলখানা আর ভেতরের দৈনন্দিন জীবনযাপন এক নয়। এখানে রয়েছে বন্দীদের মধ্যে উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্ত পার্থক্য, ক্ষমতার দাপট, ঝগড়া-বিবাদ, খুনসুটি, চাপা কান্না, মান-অভিমানসহ যাপিত জীবনের এক অদ্ভুত সত্য, যা এ গ্রন্থের প্রধান উপজীব্য। গ্রন্থটিতে যেমন রয়েছে বন্দী নারীদের জীবনালেখ্য, তেমনি এতে গ্রন্থিত হয়েছে লেখকের মানবিক অনুভূতি, জাগতিক চেতনাবোধ আর বেদনাময় জীবনের তপ্ত অশ্রুমিশ্রিত কঠিন এক সংকল্প। এ গ্রন্থে বন্দীদের কষ্টময় নিগূঢ় জীবনেতিহাসের চেয়েও জীবন্ত হয়ে উঠেছে লেখকের অনুপম ও ছান্দসিক বর্ণনা কৌশল। গ্রন্থটি পড়ে পাঠক শুধু সমৃদ্ধই হবেন না, মুগ্ধ হবেন, বিস্মিত হবেন।