সাব-ইন্সপেক্টর আনোয়ার এগিয়ে গেল কনস্টেবল নাজমুলের দিকে। এই থানায় বর্তমানে দুজন যুবক কনস্টেবল আছে। বাকিরা বৃদ্ধ নয়তো মধ্য বয়স্ক। যুবকদের একজন হলো নাজমুল তারেক, অপরজন হলো নূর হোসেন। কনস্টেবলের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল আনোয়ার, “কী অবস্থা এদিকের? তেমন কিছু পেলে?” প্রশ্ন দুটো করতে করতে লক্ষ করল ফরেনসিক বিভাগের ছেলেগুলোর দিকে। তাদের আচরণ কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। চেহারায় ফুটে উঠেছে ভয়ের ছাপ। কনস্টেবলের প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে পালটা প্রশ্ন রাখল সে, “ফরেনসিক এই ছেলেগুলো এসেছে কতক্ষণ হয়েছে?” এবার ঝটপট উত্তর দিলো নাজমুল। “বেশিক্ষণ হয় নাই স্যার। আপনে আসার অল্প কিছুক্ষণ আগে আইছে।” আর কিছু বলল না অফিসার। নিজেই এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। পকেট থেকে সাদা রঙের গ্লাভস বের করে পরে নিতে ভুলল না। এগিয়ে গিয়ে লক্ষ করল গাড়িতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন নেই। কালো রঙের একটি নিসান কোম্পানির গাড়ি। তির্যক দৃষ্টি গিয়ে পড়ে জানালা দিয়ে বেরিয়ে দরজার সাথে ঝুলতে থাকা হাতটার দিকে। একটু ভালো করে দেখলে স্পষ্ট হয়, জানালার ওপরে একজন যুবকের এলানো মাথা। চেহারাটা পুরোপুরি স্পষ্ট না। একটু এগিয়ে এসে দেখতে পেল, রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। ছেলেটার বাম হাতের দিকে লক্ষ করল—বুকের কাছে রক্ত জমে আছে। মাথা যে বরাবর রয়েছে, তার নিচে গাড়ির দরজা বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে। গাড়ির সামনে এসে মাথাটা নিচু করল। জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করল গাড়ির ভেতরে। জমাটবাঁধা রক্তের কেমন যেন এক চামসে দুর্গন্ধ নাকে এসে ঠেকে। খেয়াল করল—পাশের সিটে আর কেউ নেই। পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ বছরের একজন ফরেনসিক ডাক্তার এসে তাকে দেখে স্যালুট জানায়। ছেলেটাকে সে চেনে। এর আগেও বেশ কয়েকবার কয়েকটা কেসের সিলসিলায় দেখা হয়েছিল। নামটা মনে করার চেষ্টা করল। হ্যাঁ মনে পড়েছে, সজীব। হাত বাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী অবস্থা সজীব। কিছু কি পেলে?” প্রত্যুত্তর জানাল না ছেলেটা। বরং তার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরে কিছুটা টেনে নিয়ে গেল গাড়ির পেছন সিটে। পেছনের খোলা দরজার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে ভেতরে দেখার জন্য বলে ছেলেটা। ঠিক বুঝে উঠতে পারে না অফিসার—ছেলেটা এরকম আচরণ করছে কেন! স্বাভাবিক ভঙ্গি নিয়ে গাড়ির ভেতর তাকাতেই তার অন্তরাত্মা উড়ে যায়! এটা কী দেখল সে? তৎক্ষণাৎ নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল। এরকম দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না! একটি বিভৎস মেয়ের লাশ! মুখে কোনো চামড়া নেই! চোখগুলো যেন কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে। কেমন বিশ্রী দেখাচ্ছে দাঁতগুলো! দ্রুত পেছন ঘুরে গেল অফিসার। দ্বিতীয়বার দেখার সাহস করতে পারল না। পেটের ভেতর কেমন গুলাচ্ছে সব—চক্কর কেটে উঠেছে মাথাটা।
যাবেদ খান আবু বকর। মাতার নাম ফরিদা খান। ২০০৩ সালের মহান বিজয় দিবস দিবাগত রাতে মায়ের কোল আলোকিত করে ভুমিষ্ট হন তিনি। ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায় তার জন্ম। লোনসিং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন। নড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। অতঃপর একই কলেজের অধীনে বিবিএস প্রথম বর্ষে বর্তমানে অধ্যয়নরত অবস্থায় রয়েছেন। লেখালিখির যাত্রাটা তার খুব বেশি বড়োও না আবার ছোটোও নয়। ছোটোবেলা থেকেই তার গল্পের প্রতি আলাদা অনুভূতি ছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে আগ্রহটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি প্রথম গল্প লিখেন। দীর্ঘ দিন লেখালিখির পর অতঃপর বইয়ের পাতায় নিজের নাম দেখার ইচ্ছা পোষণ করেন। সেখান থেকেই তিনি তার মারমেইড সিরিজের তিনটি বই লিখেছেন। তার সৃষ্ট মারমেইড সিরিজে রয়েছে ‘সি অব মারমেইড, কিং অব মারমেইড এবং দ্য রিটার্ন অব মারমেইড’। পাঠকদের ভালোবাসা কামনা করছেন তিনি।