মুখবন্ধ আইনের ছাত্র হওয়ায় আদালতপাড়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালন শুধু আমার নিয়তি নির্ধারিতই নয়, সুপরিকল্পিতও বটে। ছাত্রাবস্থায় বিতার্কিক হিসেবে মোটামুটি পরিচিত ছিলাম বলে সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ থেকে সহপাঠী বন্ধুদের একটি বড় অংশ আমাকে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গঠনে পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করেছিল। সে স্বপ্নপূরণে অধঃস্তন আদালত ও উচ্চ আদালতের তালিকাভুক্ত আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে আইনপেশায় ক্যারিয়ার গড়ার দুর্গম পথ পাড়ি দেয়ার সাহস করতে পারিনি। আইনজীবী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায় ও লেগে থাকার জন্য পর্যাপ্ত সময়। এর কোনোটিই আমার ঘটে না থাকায় তুলনামূলক নিরাপদ পেশা ‘শিক্ষকতা’য় নিজেকে সঁপে দিই। তাতে মাসশেষে নিশ্চিত অর্থযোগ হলেও আইনে পড়ে আদালতের চ্যালেঞ্জ অনুভব করছিলাম না। তাই শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে আটকে রাখতে চাইনি। বারবার বিচারক নিয়োগ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি, ব্যর্থ হয়েছিও বারংবার। অবশেষে পাঁচবারের চেষ্টায় যখন বিচারক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হই ততদিনে কানের পাশের চুল পেকে গেছে। তবু পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা তিনি আমাকে বিচারক হিসেবে আদালতের অংশে পরিণত করেছেন। জীবনের এ পর্যায়ে এসে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করাই। জিজ্ঞেস করি, কেন আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার চ্যালেঞ্জটুকু নিতে পারলাম না। তখন চোখের সামনে ভেসে উঠল একজন শিক্ষানবিশ ও তরুণ আইনজীবীর পদে পদে লড়াইয়ের আখ্যান। এখন লালসালুতে মোড়ানো বিচারকের এজলাসে বসে আরও গভীরভাবে অনুভব করি। এও অনুভব করি তরুণ আইনজীবীদের দিকনির্দেশনা দিতে কিছু লেখার। এ তাড়না থেকে আমার অভিজ্ঞতাই ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। তবে লেখকের স্বাধীনতাও ভোগ করেছি পুরোদমে। তাই এ উপন্যাস কোনো গবেষণাকর্ম নয়, হয়ে উঠেছে লেখকের সহজাত স্বাধীনতার ফলে সৃষ্ট কল্পসাহিত্য। এ উপন্যাসে আমি সচেতনভাবেই কোনো আদালতের বা আইনজীবী সমিতির নামোল্লেখ করিনি। আমি বিশ^াস করি এ গল্প প্রায় প্রত্যেকটি নবীন আইনজীবীর, প্রায় প্রতিটি আইনজীবী সমিতির। বাস্তবের কারো সাথে এ উপন্যাসের কাহিনি মিলে গেলে তা কাকতালমাত্র। আমি শুধু একজন নবীন আইনজীবীর চোখে দেখতে চেয়েছি আদালতপাড়াকে, সে চোখে চোখ রেখে পাঠক যদি নিজেকে আদালতের অংশ ভাবে তবেই এ উপন্যাসের সার্থকতা। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তার দায় কেবলই আমার। এ উপন্যাস লেখার সময় প্রতিটি পাতা লিখে যাকে শুনিয়েছি তিনি আমার দুই কন্যার মা তাসি। যে অপরিসীম ধৈর্য নিয়ে সে শুনেছে সেজন্য শুধু ধন্যবাদ যথেষ্ট নয়। আমার মা, বাবা, দুই বোন ও কন্যাদ্বয়ের প্রতি বরাবরের মতো ঋণ অশেষ। প্রকাশক সুজন ভাই আস্থা রাখায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নবীন লেখক রিয়াজ মোরশেদ সায়েম একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে এ উপন্যাস লিখিয়েছেন। ধন্যবাদ সায়েম। প্রচ্ছদশিল্পী সব্যসাচী মিস্ত্রী দাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা, আমার মতো এক ক্ষুদ্র লেখকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেননি বলে। সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা আমার পাঠকদের প্রতি, যাদের অনুপ্রেরণায় প্রতিনিয়ত লেখক হওয়ার স্বপ্ন বুুনি।
জন্ম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার পায়েরখোলা গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে কুমিল্লার ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রায় অর্ধযুগ শিক্ষকতা করেছেন। ছাত্রজীবনে উপস্থাপক ও বিতার্কিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। বর্তমানে নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক হিসেবে সহকারী জজ পদে কর্মরত আছেন। বই পড়তে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন