বাংলাদেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট পরিবারগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন দেশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সংগ্রাম থেকে উত্তরণের আগেই তাদের সন্তানদের নিয়ে আবর্তিত হয় নতুন সংকটে। সেই সংকট নানাবিধ। মা-বাবার হোম সিকনেস যেমন দেশের প্রতি আত্মিক টানকে জিইয়ে রাখে, সন্তানদের হৃদয়ে তেমন কোনো অনুভব টেরই হয় না। বরং তারা ক্রমশ মিশে যেতে চায় আমেরিকার সমাজে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে পরিবারের সঙ্গে। পরিবারের চাপ তাদের বাঙালি এবং মুসলমান (যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী) করে রাখার জন্য, আর তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে আমেরিকান হওয়ার। এই দুই টানাপোড়নে তাদের যে মানসিক ক্ষরণ ও দ্ব›দ্ব তা অনেকের পক্ষে বোঝা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আমেরিকায় জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। তারা স্কুল-কলেজ ও কর্মজীবনে মোটা দাগে সাফল্য অর্জন করছে। কিন্তু তাদের পরিচয় নিয়ে তারা অনেকটা বিভ্রান্ত থাকে। বাংলা বলতে না পারার জন্য তারা নিজেরাও সংকুচিত হয়ে থাকে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে, আবার কিছু কিছু বড় শহর ছাড়া অন্যত্র বাংলা শেখাটাও সহজ নয়। এইসব ছেলেমেয়েদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন নিয়েও শুরু হয় অন্যরকম জটিলতা। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে সন্তানদের স্বপ্ন যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ঘরে এবং বাইরে নানা মাত্রার অশান্তি বাংলাদেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট বা-বাবা এবং এদেশে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানদের নিজ নিজ সংকট ও মনোবেদনা তাদের আর্থিক সাচ্ছন্দকে অনেকটাই আড়ালে ফেলে দেয়। মিজান রহমান আমেরিকায় আমাদের নতুন প্রজন্ম বইটিতে এইসব সংকট ও মনোবেদনার স্বরূপ অনুসন্ধান করেছেন।
মিজানুর রহমান, মিজান রহমান নামেই বেশি পরিচিত। জন্ম যশোরে, তবে বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি কুমিল্লার চাঁদপুরে। বড় হয়েছেন ঢাকায়। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসার। আট ভাইবোনের সংসারে তিনি ষষ্ঠ। ঢাকা কলেজ (১৯৭৯-১৯৮১) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৮২-১৯৮৮) ফাইন্যান্স-এ অধ্যয়ন শেষে কেয়ার-ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ’র বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্ট অফিসে প্রজেক্ট সাপোর্ট ম্যানেজার (ফাইনান্স এন্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হিসাবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৩ সালে উচ্চ-শিক্ষার্থে আমেরিকায় যান। পেনসিলভানিয়া’র ব্লুমসবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করার পর ১৯৯৫ সাল থেকে নিউ ইয়র্কে বসবাস। ফাইনান্সিয়াল এডভাইজর বা আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কর্মরত আছেন। পেশায় আর্থিক উপদেষ্টা হলেও নেশায় স্বেচ্ছাসেবক, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট, লেখক এবং ভ্রমণবিলাসী। পেশাগত অনেক নিবন্ধ লিখেছেন আমেরিকার বিভিন্ন প্রফেশনাল জার্নালে। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে রোটারি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সাথে আরো এক ডজনেরও বেশি বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন ও কমিউনিটি সার্ভিস অর্গানাইজেশনের সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত। স্বেচ্ছসেবী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালের ২০শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকে তিনি আমন্ত্রিত হন।