চলচ্চিত্র শিল্পমাধ্যমটি জীবনের শিল্পিত উপস্থাপনের পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্যেরও ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণীয় হলেও সেলুলয়েডেই ধৃত হয় সময় ও বাস্তবতার ছবি। বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধ, তা চলচ্চিত্রের ক্যানভাসে উল্লেখযোগ্য দলিলরূপে উপস্থাপন আমাদের নিকট অত্যন্ত আবশ্যক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। চলচ্চিত্র মাধ্যম জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে যেমন কার্যকর; তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ সমাজের ওপরও এ শিল্পমাধ্যমের রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। এটি একটি সংযোগ, বিনোদন ও যোগাযোগ মাধ্যম। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ করে চলচ্চিত্রশিল্পে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটানোর ব্যাপারটি আরও গভীর এবং বিশদভাবে চিন্তা করা দরকার। কারণ, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে প্রেরণাময় চালিকাশক্তি। আধুনিককালে চলচ্চিত্রশিল্প তাই সমগ্রবিশ্বে শিক্ষাবিস্তার, জাতিগঠন ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তাই সমসাময়িকতাকে ধারণ ও বাহন করে এ মাধ্যমকে অগ্রসর হতে হয়। সাময়িকতা ও যুগমানসকে কতটুকু স্পর্শ বা ধারণ করতে পেরেছে, তার ওপরই এ মাধ্যমটির সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভরশীল। যে দেশের চলচ্চিত্রশিল্প নব নব প্রযুক্তি ও যুগমানসকে যত বেশি সার্থকভাবে এবং বৈচিত্রের সাথে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে, প্রযুক্তির নতুনত্বকে যত সহজে আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়েছে; সেসব দেশের চলচ্চিত্রশিল্প একটি প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা লাভেও সমর্থ হয়েছে। একইসাথে চলচ্চিত্রসমূহও বিশ্ব চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাসে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান করে নিতে পেরেছে। চলচ্চিত্র প্রযুক্তির বিশ্বব্যাপী যে উন্নয়ন ঘটছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। চলচ্চিত্র সত্যিকারভাবেই জনগণের শিল্পে পরিণত হতে চলেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন যুগের এ সম্ভাবনাটার সর্বোচ্চ ব্যবহার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত ও চলচ্চৈত্রিক শৈলীর যেসব পরিবর্তন ঘটছে, তার সাথে এদেশের চলচ্চিত্রশিল্প সংশ্লিষ্টদের পরিচিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক। সৃজনশীলতা ও উন্নত প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় সাধন করতে পারলেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প আন্তর্জাতিকমানের ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হবে। চলচ্চিত্রনির্মাণে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি দেশব্যাপী প্রেক্ষাগৃহসমূহের যথাযথমান নির্ধারণ পূর্বক এর প্রজেকশন সিস্টেম, সাউন্ড সিস্টেম ও স্ক্রিন সিস্টেমের আধুনিকীকরণসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।