মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই তাঁদের স্মৃতিকথাকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা লিখেছেন যুদ্ধক্ষেত্রের স্মৃতি, বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা লিখেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্মৃতি, প্রবাসীরা লিখেছেন প্রবাসে যুদ্ধতৎপরতার স্মৃতি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকের স্মৃতিকথায় হানাদার বাহিনীর নির্মম নৃশংসতা ও স্বজন হারানোর কাহিনীর স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে। একাত্তরে যাঁরা শরণার্থী হিসেবে ভারতে গিয়েছিলেন তাঁদের অনেকে শরণার্থী জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন। এসব স্মৃতিকথায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পরিস্থিতি ও মানবিক সংকটের নানা চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান সরকার, মিলিটারি বাহিনী, রাজাকার বাহিনী প্রমুখ আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে স্মৃতিচারণ করেছেন তাতেও তাঁরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করতে পারেননি। বস্তুত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথায় ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিশস্ত প্রতিফলন ঘটেছে। মূলত সেই প্রতিফলন উদ্ধারের লক্ষ্যেই ‘স্মৃতিকথায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থটি পরিকল্পিত। গ্রন্থটি আমার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের পরিমার্জিত রূপ। গবেষণায় দেখো গেছে, বাংলাদেশের মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট, মান-অপমান, সম্ভ্রম, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, জীবন-মৃত্যু সকল প্রকার ত্যাগকে মাথা পেতে নিয়েছিলো। এসব অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া তাঁরা স্মৃতিকথায় প্রকাশ করেছেন। গবেষণালব্ধ এসব তথ্য ও প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধপরিস্থিতি ও মানবিক সংকটকে বুঝার জন্য যেমন সহায়ক তেমনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে জানার জন্যেও সহায়ক।