এই গল্প দেড় দশক আগের তিলোত্তমা রাজধানী শহরের আধার জগতের। মূল চরিত্র আহাদ যে ছাপোষা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান এবং প্রচন্ড রকমের অন্তর্মুখী, যে এই অন্তর্মুখিতার জন্য জীবনের সব ক্ষেত্রেই পরাজিত হয়ে যেতে থাকে, এমনকি নিজের পরিবারের মাঝেও সে হয়ে পরে মূল্যহীন। আহাদের এই মধ্যবিত্ত ক্লায়কেশে কাটানো যাপিত জীবন অবশ্যই পাঠকেরা নিজেদের সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারবেন। পারিবারিক চাপেই তাকে নগর ঢাকায় পা রাখতে হয়। এখানেই এসে সে জড়িয়ে পরে এই নগরের আধারে ঢেকে রাখা অন্য আর এক জগতে। যেই জগতে, নেশা, আগ্নেয়াস্ত্র, কাম, হিংস্রতা আর আদিম উন্মাত্ততা তাকে ঘিরে রাখে। প্রধান নারী চরিত্র মনিকা সেন, যে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেনীর প্রতিভু, নিজের স্বপ্ন কে যে ছুয়ে দেখবার জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে চলে, কিন্তু স্বপ্ন কে ছুয়ে দেখার মুহুর্তে সে দেখে তার পাশে আনন্দ উদযাপনের কেউ নেই। একান্ত আপন বলে যাদের হাত সে ধরে রাখতে চেয়েছে তারাই ছেড়ে গিয়েছে তাকে, ভাগ্যের ফেরে সে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে আহাদের সাথে। পুরোপুরি দুই ভূবনের, দুই ধর্মের, ভিন্ন সমাজের এই যুগলের গল্প এগুতে থাকে। এই গল্প কখনো আধারের ঢাকার সম্রাট ট্যারা সেলিমের, কখনো পেটের দায়ে পাপে জড়িয়ে পড়া আলামিন আর স্বপনের, কখনোবা এই গল্প পুলিশ অফিসার বাদল হাসানের, কখনো বা মেধাবী তরুণ পার্থ এর। এই হয়তো এই গল্প আপনাকে নিয়ে যাবে মফস্বলের ছোট শহরে, আবার নিয়ে যাবে বিত্তবানদের বসবাসের আলো ঝলমলে দুনিয়ায়, এই হয়তো দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ দেখবেন, আবার দেখবেন অতিসাধারণ কোন বিদ্যা শিক্ষার স্থান। এই হয়তো এই নগর ঢাকার খুব সাধারণ স্থান, এই হয়তো উঠে আসবে মিডিয়া পাড়ার তারকা খচিত আলোকময় জীবনের ছবি। চোখের সামনে ভেসে উঠবে এফডিসির রিল, লাইট, বুম, ক্যামেরার দুনিয়া, আবার আসবে সেই জগতের নোংরামো। চোখের কোনায় এই দেশের রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিবিম্ব স্পষ্ট ভাবে ধরা দেবে। দিন শেষে আহাদ আর মনিকার এই গল্প আপনাকে কোথায় টেনে নেবে সেটা জানার জন্য পড়তে হবে এই উপন্যাস।
আসিফ আহম্মদ মাসুদ তুলা রাশির জাতক। জন্ম ৪ অক্টোবর, ১৯৯২ কুষ্টিয়াতে। সেখানের জিলা স্কুল, সরকারি কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক, এরপর ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তার শৈশব থেকেই গল্প উপন্যাস পড়ার তীব্র নেশা ছিল যা সময় গড়াবার সাথে সাথে আরো বেড়েছে। লেখালেখির শুরুটা হয়েছে ফেসবুকে বিভিন্ন গল্প, কবিতা এবং পাশাপাশি পড়ে ফেলা বিভিন্ন বইয়ের পাঠক মূল্যায়ন লেখার মধ্য দিয়ে। লেখালেখিটা তার গভীর আসক্তির জায়গা। জাগৃতি প্রকাশনী থেকে ২০২২ অমর একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস "সায়াহ্ন"। প্রকাশের পর যা সমাদৃত হয়েছে পাঠক মহলে। তার লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনি লেখেন খুব সহজ সাবলীল বাংলায়, যেখানে প্রমিত বাংলার পাশাপাশি নগর জীবনের কথ্য ভাষার প্রাধান্য থাকে। নিজের লেখাতে তিনি সব সময় তুলে ধরেন অতিসাধারণ সব মানুষদের, যাদের যাপিত জীবনের গল্প গুলো পড়লে মনে হবে 'আরে এটা তো আমার জীবনেরই গল্প।' প্রথম উপন্যাসে তিনি নগর জীবনে অভ্যস্ত এক তরুনের আটপৌরে জীবনের ভাবনার দোলাচলের প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন বেশ মুন্সিয়ানার সাথে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ বইমেলাতে প্রকাশিত হল তার দ্বিতীয় উপন্যাস " জল জোছনার দিন "। এই উপন্যাসেও চেষ্টা করেছেন দুই মলাটের ক্যানভাসে বাংলাদেশের অতিবাস্তব চিত্র তুলে ধরবার। বর্তমানে একটি খ্যাতনামা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে "সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার" হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখি। ব্যাক্তিজীবনে অবিবাহিত, স্বল্পভাষী এবং প্রচন্ড রকমের ঘরকুনো এই মানুষটির অবসরে কাটে বই পড়ে আর দেশী- বিদেশী চলচ্চিত্র দেখে।