প্রকৃতপক্ষে কমরেড স্ট্যালিন নিজেকে ভাষাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ মনে করতেন না। কিন্তু সোভিয়েত বিপ্লব-পরবর্তীতে ভাষাতত্ত্বে এন ওয়াই মার এক আকাশচুম্বী অবস্থানে উঠে আসেন। ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কিত তাঁর জাফেটিক তত্ত্বকে তিনি ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কিত মার্কসবাদী বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলে দাবি করতে থাকেন। তিনি ইতোপূর্বের পরম্পরাসমূহকে পর্যন্ত বাতিল করতে থাকেন। এব্যাপারে প্রকৃত মার্কসবাদী ব্যাখ্যা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই কমরেড স্ট্যালিনের ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কিত লেখাটি পাঠকদের কৌতূহলের কারণে পাঠকদের প্রশ্নোত্তর সমেত ১৯৫০ সনের প্রাভদার কয়েকটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সনে পুস্তিকা আকারে তা ‘মার্কসবাদ ও ভাষাতত্ত্বের সমস্যা’ শিরোনামে মস্কো থেকে বিদেশি ভাষা প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করে। ১৯৭১ সনে বেজিং থেকে প্রকাশিত চীনা সংস্করণে বিভিন্ন নোটসমেত তা পুনরায় প্রকাশ করে। নেটে ‘ঝঃধষরহ জবভবৎবহপব অৎপযরাব (গধৎীরংঃ.ড়ৎম)’-এ লেখাটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে লেখাটির একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য বিদ্যমান। ভাষার দাবি নিয়ে তখন বিভিন্ন বাম ও জাতীয়তাবাদী মহলে বিতর্ক ছিল। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম কিংবদন্তী নেতা কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা লেখাটি শীর্ষস্থানীয় কমিউনিস্ট নেতাদের নজরে আনেন। এবং ভাষার প্রশ্নে রাষ্ট্রভাষা শুধু বাঙলা নয়, পাকিস্তানের সকল অংশের নিজ নিজ ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিটি কমিউনিস্টরা সামনে নিয়ে আসেন। এতে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের জাতিসত্ত্বাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতিও মেলে। তাছাড়া বামপন্থী মহলেও ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন বিভ্রান্তি রয়েছে। শ্রেণিবিভক্ত সমজে ভাষারও শ্রেণি আছে, এমন বিভ্রান্তিও দেখা যায় । কমরেড স্ট্যালিন এসব বিভ্রান্তি ভেঙে দিয়েছেন। বাংলদেশের প্রগতিশীল ও শ্রেণিসচেতন ভাষাতত্ত্বে আগ্রহী পাঠকদের প্রয়োজনকে সামনে রেখে বর্তমান প্রবন্ধকার তা ভাষান্তর করেছেন।