ক্রাইম পেট্রোল-এর সিরিজগুলো দেখতে দেখতে একসময় নিজেকে অনেক বড় গোয়েন্দা ভাবতাম। মনে হতো কোনো ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন খুবই সহজ একটি কাজ। কিন্তু পুলিশ হওয়ার পর যখন নিজেকে সত্যি সত্যি গোয়েন্দা রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয়েছে, কিংবা কোনো একটি ক্লু-লেস মার্ডার বা ডাকাতি মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয়েছে, তখন বুঝতে পেরেছি এই কাজটি সত্যি অনেক কঠিন। প্রতিটি অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটনের প্রতি পদক্ষেপে রয়েছে চ্যালেঞ্জ, রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে থাকে রহস্যের গন্ধ। আসামি গ্রেফতারে রোমাঞ্চের পাশাপাশি রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকিও। আসামির অতর্কিত হামলা কিংবা অস্ত্রের আঘাতে আহত এবং নিহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কখনও কখনও ব্যর্থতার গ্লানি ভর করে মাথায়, যার সম্পূর্ণ দায়ভার পুলিশ অফিসারের। আমার লেখা ‘অপরাধের সাতকাহন’ গ্রন্থটি সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে আইন ও অপরাধ বিষয়ক গ্রন্থ, যার প্রতিটি ঘটনা এবং চরিত্র সত্য। আমার চাকরি জীবনে আমি নিজে যে-সকল মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছি, যে মামলাগুলো রহস্যে পরিপূর্ণ এবং প্রতিটি মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আমি পুরস্কৃত হয়েছি, শুধু সেই মামলাগুলো আমার গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। বইটিতে অন্যান্য গোয়েন্দা সিরিজ কিংবা ক্রাইম পেট্রোল-এর মতো অতিরঞ্জিত কোনো কিছু লেখা হয়নি। শুধু ঘটনায় উল্লিখিত চরিত্রের প্রয়োজনে কাল্পনিক নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যার সাথে বাস্তবিক নামের কোনো মিল নেই। কিন্তু ঘটনায় উল্লিখিত প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনাস্থল শতভাগ বাস্তব, যার প্রতিটি ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলা হয়েছে, আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলাসমূহ বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, কিছু কিছু মামলার রায়ও হয়ে গেছে। প্রতিটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর প্রতিটি পদক্ষেপে একজন পুলিশ অফিসারকে কী কী ভূমিকা পালন করতে হয়, কীভাবে কোনো একটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয়, আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে কত রকম ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়, কত শত কৌশল অবলম্বন করতে হয়- তার সবগুলো বিষয় আমি আমার এ গ্রন্থটিতে উল্লেখ করেছি। যেকোনো একটি ক্রিমিনাল হিস্ট্রি পাঠক একবার পড়া শুরু করলে, সেটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বই ছেড়ে উঠতে পারবেন না। প্রতিটি অপরাধের রয়েছে আলাদা আলাদা ক্লাইমেক্স, বাঁকে বাঁকে রয়েছে রহস্যের ছড়াছড়ি, অপরাধ সংঘটনে অপরাধীরা আশ্রয় নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের, নিজেকে বাঁচানোর জন্য অবলম্বন করেছে সব ধরনের সতর্কতা। গোয়েন্দা রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি আমি ‘অপরাধের সাতকাহন’ গ্রন্থটিতে নিজের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি, যেখানে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নির্যাতিত, নিপীড়িত আর অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে কিংবা বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ালে মানুষ পুলিশকে কতটা আপন করে নেয়, কতটা আত্মার আত্মীয় আর আপনজন মনে করে- আমার গ্রন্থটি পড়ে পাঠক তা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।