বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের মহানায়ক এস এম কামাল এস এম কামাল বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের অগ্রদূত। তিনি ছাড়া বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির শুরুর দিকে কোনো কিছুই হত বলে আমি বিশ্বাস করি না। কামাল ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট যা আইবিএ নামে সুপরিচিত সেই আই বিএ’র প্রথম ব্যাচের সেরা ছাত্র ছিলেন। কামাল ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ১৯৭৯ সালের দিকে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে আমি তখন ক্যারিয়ার সবে শুরু করেছি। আর কামাল ভাই তখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কম্পিউটার ব্র্যান্ড আইবিএম বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার। আইবিএম সে সময়ে বাংলাদেশেরও শীর্ষ কম্পিউটার ব্র্যান্ড। কামাল ভাইয়ের নাম আমরা সবাই শুনতাম কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমাদের সেভাবে দেখা হত না। তাঁকে চাকরিসূত্রে প্রায়শই দেশের বাইরে যেতে হত। তাঁর অফিসে গেলে তাঁর সেক্রেটারি বলতেন যে, ‘তিনি অফিসে নেই, দেশের বাইরে আছেন।’ যাহোক দুই বছর পরে এস এম কামালের সঙ্গে আমার চাক্ষুষ সাক্ষাৎ হয়। এস এম কামালের নেতৃত্বেই আমরা ৮০’র দশকে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শুরু করি। এস এম কামাল বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির শুরুটাই হয়েছে বিসিএস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আজকে নির্দ্বিধায় আমি বলতে পারি যে, এসএম কামালের নেতৃত্ব ছাড়া আমাদের দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে উঠতে পারত না। তাঁর মতো একজন সৎ, নির্মোহ এবং জ্ঞানী কিন্তু একই সঙ্গে প্রচারবিমুখ মানুষ—আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বেশি দেখিনি। বিসিএসের পরে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের একমাত্র অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এরও প্রতিষ্ঠাতা কার্যনির্বাহী পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য, পরবর্তীতে এর সভাপতি ছিলেন এসএম কামাল। কামাল ভাইয়ের যে গুণটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হচ্ছে তাঁর হার না মেনে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়ার মন-মানসিকতা। সেই ১৯৮৪ সালে আমরা যখন বিসিএস প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু করি তখন আমরা পদে পদে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছে। সরকারি মহল ও অন্যান্য আরও অনেক জায়গা থেকে আমাদের উপরে চাপ এসেছিল। কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দেইনি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়েছিলাম। এটা সম্ভব হয়েছিল কামাল ভাইয়ের যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। কম্পিউটারের উপরে শুল্ক প্রত্যাহার, পাঠ্য বইয়ে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম অন্তর্ভূক্ত করা, ভিস্যাট ইন্টারনেট উন্মোচনসহ নানা বিষয়ে আমাদের সরকারি মহলের সঙ্গে নিয়মিত দেন-দরবার করতে হত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি আমলা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে মত–বিরোধ হত এবং এর ফলে কোনো অগ্রগতি হবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে যেত। আমার তখন বয়স কম, তার উপরে একটু ঠোঁটকাটা এবং অধৈর্যও ছিল। দেখা যেত, আমি বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু কামাল ভাই তখনো মাথা ঠান্ডা রেখে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কখনোই কোনো পরিস্থিতিকে আমি এসএম কামালকে দিশেহারা হতে দেখিনি। বরং ঠান্ডা মাথায় নিজের লক্ষ্যে অটুট থেকে তিনি কাজ করে গিয়েছেন। এ কারণেই এস এম কামাল শুধু এই ইন্ডাস্ট্রির গুরু নন। তাঁকে আমিও আমার গুরু মনে করি। এই ইন্ডাস্ট্রির যে কয়েকজন মানুষের কাছে থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি তঁাদের মধ্যে এসএম কামাল অন্যতম। যখনই আমরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতাম তখনি সূচিপত্র কম্পিউটার, আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন, ভি-স্যাট ইন্টারনেট সংযোগ উন্মুক্তকরণ এবং সাশ্রয়ী করে তোলাসহ যেকোেনা ধরনের কাজেই আমাদের তাঁকে প্রয়োজন ছিল এবং তিনি সানন্দে আমাদের নেতা হিসেবে সেই কাজগুলো করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের পূর্বপুরুষ এই ইন্ডাস্ট্রি এবং আমাদের সরকার এসএম কামালকে তঁার যোগ্য সম্মান দেয় নি। আমার মতে, এটা আমাদের বিশাল ব্যর্থতা। এসএম কামাল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সফলভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এস এম কামালের এই আত্মজীবনী সত্যিই সুখপাঠ্য। আমি মনে করি, এসএম কামালের এই জীবনী থেকে আমাদের তরুণ-তরুণীরা অনেক কিছুই শিখতে পারবে। য্ুক্তিযুক্তভাবেই এসএম কামাল বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির নায়ক।
রাহিতুল ইসলাম (Rahitul Islam) একজন বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক, লেখক ও নাট্যকার। বর্তমানে দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে সাংবাদিকতা করছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করেন। তবে তাঁর আগ্রহের বিষয় মূলত তথ্যপ্রযুক্তি। সংবাদপত্রে লিখে আর কথাসাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন পাঠকদের এই জগতের জানা-অজানা নানা বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত করাতে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’, ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’, ‘হ্যালো ডাক্তার আপা’, ‘ভালোবাসার হাট-বাজার’ এবং ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া’। ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ বইটি ফিলিপাইন থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ বইয়ের জন্য জাতীয় ফ্রিল্যান্সিং অ্যাওয়ার্ড (২০১৯) এবং ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’র জন্য এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার (২০২১) পেয়েছেন।