রোমান্টিক/ক্রাইম থ্রিলার জনরার "মাল্টি টাইমলাইন" ভিত্তিক উপন্যাস। উপন্যাস ত্রিসত্তা, ৩টি টাইমলাইন, ৬টি কেন্দ্রিয় চরিত্র, ৯টি আলাদা আলাদা গল্প, ১৮টি টুইস্ট ও ৩৬টি পার্শ্ব চরিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে। যেখানে পাবেন- থ্রিলার, সামাজিক, রোমান্টিক, ও ডিটেকটিভ জনরার স্বাদ। থাকবে কিছু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। পড়ন্ত বিকেলের শেষ লগ্নে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো অনামিকা। নীলাম্বরের পশ্চিম অংশ তখন কমলা রঙে নিজেকে রাঙিয়েছে। পেঁজা মেঘেও বিক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে সেই রঙ। সূর্য তখন অস্তগামী। তাই তার আলোর শেষ বিন্দুটুকু মায়াবী পরিবেশের সঞ্চার করছে। সেই মায়াবী নীলাম্বরে চোখ ঠেকিয়ে রেখেছে। হাতে বই। শরৎচন্দ্রের ❝পরিনীতা❞। শেখর এবং ললিতায় মগ্ন অনামিকার ধ্যান ভঙ্গ করে ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ❝অনিক❞। দেখেই ঠোঁটে ফুটে উঠলো স্বচ্ছ, স্নিগ্ধ হাসি। অনামিকা ফোন রিসিভ করতেই সুগাঢ় কণ্ঠ কানে ভেসে উঠল, "কি করছো?" "আকাশ দেখছি।" "আকাশে দেখার কি আছে?" অনামিকা মৃদু হেসে বলল, "নীলাম্বরে নিহিত কত শত কথা। সেই ভাষা পড়ছি। মেঘেদের গুঞ্জন শুনছি। শুনেছি আকাশের নীরব কথাগুলো নাকি চোখের ভাষা থেকেও গভীর। কখনও আমার চোখের ভাষা পড়েছো?" "না।" বিনা ভণিতায় নাকচ করলো অনিক। ফলে মিইয়ে গেল অনামিকা। মনঃক্ষুণ্ণ হলেও চুপ করে রইল। অনামিকার মৌনতাকে চিরে অনিক আবারো বলে উঠলো, "আমি তোমার চোখের ভাষাকে উপেক্ষা করে তোমার আত্মার ভাষাকে পড়তে চাই অনামিকা।" ছেলেটির সুগাঢ় কণ্ঠ কানে আসতেই নিঃশব্দে হাসল সে। গালে রক্ত জমলো অজান্তেই। নিস্তব্ধতা চিরে বলল, "পড়ে নাও!" "তাহলে যে আমাকে তোমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে হবে।" "মস্তিষ্কে প্রবেশ করে কি করবে?" "আমার অসুস্থ চোখের দৃষ্টি তোমার জন্য ট্রুথ সিরাম হিসেবে কাজ করবে। তুমি বুঝতেও পারবে না যে নিখুঁত পাপগুলো তুমি করেছো সেগুলো আমি পড়ে নিচ্ছি এবং তোমাকে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করতে থাকা বিবেক নামের ক্ষুধার্ত নেকড়েটার ক্ষুধা নিবারণ করছি! আমি তোমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষের মাঝে বিচরণ করবো, অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াবো! নির্জীব বরফশীতল চিন্তাগুলোতে তাপ দেব আবার আন্দোলিত হতে থাকা চিন্তাগুলোর মাঝে তুষারপাত নামাবো! তোমার ভ্রান্ত সন্দেহগুলো, যেগুলো ক্রমাগত বিশ্বাসে রূপ নিচ্ছিল, উপড়ে ফেলবো আমি, এক নিমিষে।" "অনিক, আত্মদাম্ভিক এই মেয়েটিকে কেন ভালোবাসো তা জানি না। তোমাকে ভালোবাসার কোন যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তোমাকে ভালোবাসাটা অজান্তে-কাকতালীয় নয়। তোমাকে ভালোবেসেছি তুমি সুদর্শন পুরুষ বলে নয়, সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারো বলে নয়, উচ্চ শিক্ষিত কিংবা টাকাওয়ালা বলে নয়। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার নিরাপত্তাহীন রাতগুলো তোমার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো বলে, সারাজীবন বাহুডোরে আগলে রাখবে বলে।" কিছুটা থেমে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে কাঁপা স্বরে বলল, "তাই আমার মস্তিষ্কে, আমার হৃদয়ে, আমার রক্তের শিরা-উপশিরায় পদচারণায় তোমাকে কোন অনুমতি নিতে হবে না, বরং আমাকে অনুমতি দাও নিজেকে সঁপে দেওয়ার।" "আমি সেই কবেই তোমাকে নিজের করে নিয়েছি, মর্মে উপলব্ধি করি, আমার অকাল পিতৃত্বের স্বাদ।" "আমার জীবনের কালো রাতটির কথা মনে আসলেই যখন আঁতকে উঠি ঠিক সে সময়টায় আমাকে জাপটিয়ে ধরে কানে কানে বলবে- তোমার ঐ আঁতকে ওঠাকেই ভালোবাসি।" "হুম, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমার রাগ, তোমার অভিমান, তোমার কষ্টগুলোকে, ভালোবাসি তোমার সকল ব্যথা-বেদনা।"