সোনালি একটি জীবনের প্রত্যাশায় আমার নামকরণ। ‘জেরিন’ নামটি বাবা রেখেছেন, বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে ছোটবেলা থেকে স্কুলশিক্ষক মায়ের চেষ্টায় ছিল অনন্য যুগলবন্দি। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশ করতে প্রেরণা পরিবার থেকেই। তিতাসের সঙ্গে মনের বন্ধন প্রশান্তির আশ্রয় হিসেবে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, খোলা মাঠ, মেঠোপথ ছিল আমার মুক্ত মনের বিচরণ। বাঁশঝাড় উঁচু তালগাছ ফল-ফুলের গাছ, সবুজের ছায়া সুখ দিয়েছে। এসবই লালন করি মনে। ছোটবেলা থেকে ডায়েরি লিখার অভ্যাস। তবে চলার পথে অভিজ্ঞতার উপলব্ধি, শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি রোমন্থন, মানুষের জীবনের কোলাহল, সমাজের অসংগতিগুলো আমাকে ভাবিয়েছে। সেই ভাবনাগুলো লেখার অভ্যাসকে প্রগাঢ় করেছে। তা ছাড়া জীবন একটি অধ্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। বাস্তবতায় প্রতিটি মানুষের জীবনেই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ যেন লাল-নীল-সাদা-কালো হরেক রকম রঙের মতোই বৈচিত্র্যময়। সেই রঙের সমাহারের হিসাবনিকাশ না কষে বেহিসেবি রঙে কবিতার ক্যানভাস রাঙাতে চেয়েছি। আর আমি দুঃখের রঙকে পাশে রেখে সুখের রঙ ছড়াতে চেষ্টা করি কবিতায়। আমি মনে করি দুঃখকষ্টই আমাকে শাণিত করেছে, সমৃদ্ধ করেছে। দুঃখের নির্যাসই আমার শখের কাব্য কথা ‘বেহিসেবি রঙ’। লেখালেখির শখকে সঙ্গে রেখেই কবিতা আবৃত্তির নেশা ছোটবেলায়, তবে নতুন মাত্রায় আবৃত্তি শিখতে গিয়ে কবিতা এবং আবৃত্তির শিল্প প্রকরণ, শিল্পরূপ, কণ্ঠে কাব্য রসবোধ এবং নান্দনিক উপস্থাপনের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচয় ঘটান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় আল আমীন শাহীন। আবৃত্তি ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে তিনি কবিতা ও গান লিখতে সাহস দিয়েছেন। সেই থেকে নতুনমাত্রা পরিবার আমাকে একটি বই প্রকাশেরও উৎসাহ দেয়, আমিও দুঃখকষ্টের রঙের খেলাঘরে নানা অধ্যায় নিয়ে ইটগাঁথার মতোই শব্দ গাঁথুনিতে কিছু লিখে একটি কাব্য বসত গড়েছি। ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিত্ব চিত্রশিল্পী শ্রদ্ধেয় আশরাফ পিকো বিভিন্ন আঙ্গিক বুঝিয়েছেন। দৈনিক মানবজমিনের যুগ্ম সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শামীমুল হক বইটি প্রকাশে আন্তরিক ভূমিকা পালন করেছেন। সবার কাছে ঋণী। কবি হব এবং কবি পরিচিতির জন্য কিছু লিখিনি। বইটিতে বেহিসেবি কিছু কথা লিখেছি। সেখান থেকে পাঠকরা যদি কিছু সুবাস পায় তাতেই আমি ধন্য। তবে আমার জমানো কথাগুলো একটি মলাটে বাঁধন ও আচ্ছাদনে গ্রন্থিত হয়েছে এটাই আমার বড় সুখ।