স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের যে কয়জন সংগীতকার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের সংগীত জগতে নতুন সম্ভাবনার সূচনা করেছিলেন, তাদেরই একজন শেখ সাদী খান। স্বাধীনতার পর যখন পরাধীনতার সকল বদ্ধ জানালাগুলো খুলে গেল, সারা পৃথিবীর মুক্ত বায়ু এসে নব-চেতনার সৃষ্টি করল, সর্বক্ষেত্রেই মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটল তখন আমাদের সংগীতেও নতুন নতুন ভাবধারা অগ্রসর হতে লাগল। নবীনরা কেউ পাশ্চাত্য সংগীতধারায় প্রভাবিত হয়ে দেশীয় সংগীতধারার সঙ্গে সংমিশ্রণে নতুনত্বের সন্ধান করলেন। কেউ কেউ লোকসংগীতকে আধুনিকতার আঙ্গিকে ব্যবহার করে আধুনিক ধারাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে গেলেন, শেখ সাদী খান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি উপমহাদেশের ঐতিহত্যবাহী সুরসম্রাট আলাউদ্দীন খাঁ পরিবারের একজন সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বভাবতই উচ্চাঙ্গসংগীত বা রাগসঙ্গীতকেই সমসাময়িক রুচির দাবিকে সমুন্নত রেখে স্বতন্ত্র একটি ধারা সৃষ্টি করলেন। একটি ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবারের সদস্য হিসেবে তাঁকে কঠিন এবং সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত হতে হয়েছে, এর ছাপ তাঁর প্রতিটি কাজেই ফুটে উঠেছে। সংগীতের বিশুদ্ধতা রক্ষায় তাঁর দায়বদ্ধতা থেকে কখনও তিনি বিচ্যুত হননি। এক্ষেত্রে তাঁকে আমাদের দেশের সংগীতের একটি প্রজন্মের শেষ প্রতিনিধিও বলা যায়। শেখ সাদী খানের সঙ্গে আমার হৃদ্যতা দীর্ঘদিনের, সেই ষাটের দশক থেকে। তখন তিনি আলাউদ্দীন লিটল অর্কেস্ট্রাতে বেহালা বাজাতেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারে কাজ করতেন। পরবর্র্তীকালে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হন এবং কালক্রমে একজন সফল জনপ্রিয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজ অবস্থানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। শেখ সাদী খান এখনও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দীর্ঘজীবী হোন। এই বইটিতে শেখ সাদী খানের সংগীতময় জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বইটি সংগীতপ্রেমী ও আগামী প্রজন্মের শিল্পীদের সংগীত ভাবনায় অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে-এই আমার প্রত্যাশা। আমি বইটির সাফল্য কামনা করি।