পৃথিবীতে বই লেখা হয়েছে ঢের। প্রক্রিয়াটি চলমান। হিসাব করলে হয়তো দেখা যাবে, নিয়মিত বিরতিতে এ দুনিয়ায় বইয়ের স্তূপ বাড়ছেই কেবল। সেই স্তূপের বৃদ্ধিতে কিছুটা অবদান রাখতে এগিয়ে এসেছে এই অজ্ঞাতকুলশীলও। এত এত বইয়ের ভিড়ে এই দুই মলাট হাতে নেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ, পাঠক। কেতাবি ব্যাকরণ মতে, যিনি লেখেন, তিনি লেখক। যদিও সেই অভিধা আদৌ এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কি না, তা ভাবনার বিষয়। কারণ জনের প্রতিনিধি হতে গেলে যেমন সমর্থকের স্বাক্ষর লাগে, তেমনি লেখক হতে গেলে লাগে পাঠকের স্বীকৃতি—তা ওই পাঠকের সংখ্যা এক হলেও সই! পাঠক, আপনার হাতের বইটি গল্পের। এগুলো লেখার সময়কাল ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল। এই সময়ের ব্যবধানে লেখা কিছু গল্পের মধ্যে ৮টি এখানে মলাটবন্দী হলো। আমার গল্পগুলো জীবনের জাবেদার ডেবিট-ক্রেডিটে হিসাব মেলাতে না পারা মানুষের। যারা ঝাঁ-চকচকে নগর, বুনো বর্ষায় চুপসে যাওয়া শহরতলি কিংবা শীতল কোনো গ্রামে নির্লিপ্ত জীবনকে যাপন করার সংগ্রামে মত্ত। হয়তো আমরা নিজেরাও এমন। অর্থাৎ কোনো অতি বা কল্পমানবের কথা গল্পে উঠে আসেনি। সাহিত্যের বিচারে এগুলো কতটা গল্প হলো, সেটা গভীর বিচার-বিবেচনার বিষয়। মূলত এই দ্বিধা থেকেই পাণ্ডুলিপিটা ঘরের এক কোনায় পড়ে ছিল দুই বছর ধরে। নিজের প্রতিও প্রশ্ন ছিল— একজন পাঠক হিসেবে অন্য অনেক বইয়ের ভিড়ে আমি এই বইটি পড়ব কেন? কারণ বই পড়তেও একজন পাঠককে প্রথমত অর্থ, দ্বিতীয়ত সময় বিনিয়োগ করতে হয়। এই বিনিয়োগটি যথেচ্ছ বলে বিবেচিত হবে, যদি পাঠক বইটি পড়ে কেবলই বিরক্ত হন। যদিও নিজস্ব সিদ্ধান্তে আর আসা হয়নি। তাই হয়তো ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়া, গল্পগুলোর বই হিসেবে প্রকাশিত হওয়া। এটা অনেকটা জেনেশুনে অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার মতো বিষয়। দগ্ধ হয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বটে, তবে পুড়ে খাঁটি হওয়ার সম্ভাবনাও তো কিছু থাকে!