গ্রন্থটিতে তিনশ’রও অধিক সাবেক, অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগ, তাঁদের শহীদ ও গত হওয়ার তারিখের ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এঁদের মধ্যে অনেকে রণাঙ্গনে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন; কেউ প্রবাসে গিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বহির্বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান, সুধীজন ও শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করেছেন; কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের রোডম্যাপ এঁকে দিয়েছেন; অনেকে এলাকার ছাত্র-ছাত্রী ও জনগণের মাঝে চেতনার বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছেন; কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, আশ্রয়, অর্থ ও চিকিৎসা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন; কেউবা আবির্ভূত হয়েছিলেন দক্ষ সংগঠক ও প্রশিক্ষক হিসেবে। ফলশ্রুতিতে তাঁরা পেয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে চাকরিচ্যুতি, গ্রেফতার, নির্যাতন, দেশ ছাড়ার হুমকি ও মৃত্যুর মত শাস্তির পরওয়ানা। আবার কেউ কেউ দেশপ্রেমের চেতনা ভুলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চলে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভের বিরুদ্ধেও। গ্রন্থটিতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে; প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, সংগঠন ও নেতৃত্ব প্রদানে দেশের আপামর শিক্ষক সমাজের বহুমাত্রিক ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া পৃথক পৃথক অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের উপর পাকবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন; মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী শিক্ষক; মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী বহির্বিশ্বের শিক্ষক সমাজ এবং খেতাবপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোট ৮টি অধ্যায় রয়েছে গ্রন্থটিতে। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকার উপর ব্যাপক আলোচনা পাওয়া গেলেও সামগ্রিক অর্থে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের আলোচনা তেমন পাওয়া যায় না। এসবের শূন্যতা পূরণের জন্যই এই গ্রন্থটি।