সময় চিরকালই কোনো না কোনো সন্তাপ তৈরি করে, অস্তিত্বের ভেতরে তৈরি করে টানাপড়েনের বিচিত্র অধ্যায়। কবি এহসানুল ইয়াসিন তাঁর কবিতার মধ্যে সেই অধ্যায়গুলোকে নিবিড়ভাবে তুলে ধরেন। তিনি বহুদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কবিতা লিখলেও তেমন কোনো হাঁকডাক নেই। কবিতা লেখার জন্য বোধের যে জগৎ অহর্নিশ আলো-আধাঁরে, রঙে-রেখায়, চাপে ও তাপে একান্ত আপন কোনো জগৎ তৈরি করে নেয়, ইয়াসিন সেই জগতের বাসিন্দা। তাঁকে কিছুতেই বলা যাবে না যে, তিনি প্রেমের কবি, প্রকৃতির কবি, দ্রোহের কবি, প্রতিজ্ঞা বা প্রত্যয়ের কবি। অধিকন্তু যা কিছু নিয়ে জীবন তাঁর আপন যাপনে সময়ের মধ্যে তলিয়ে থাকে, সেই জীবনকেই ইয়াসিন তাঁর কবিতার মধ্যে স্থান দিয়েছেন। আর এই জীবনের বহুমাত্রিক পরিচয় ফুটে উঠেছে এখানে কেউ নেই নামক কবিতাগ্রন্থে। সহজ-স্বচ্ছলতা এই কবিতাগ্রন্থের নিয়তি। নিজস্ব কাব্যভাষা, কাব্যপ্রকরণ ও কাব্যস্বভাবের যে উৎকর্ষের জন্য একজন কবি স্পর্ধিত হয়ে ওঠেন, তাঁর সকল লক্ষণ এই গ্রন্থটিকে মহিমামণ্ডিত করে তুলেছে। কবিতাগ্রন্থটিতে ইয়াসিনের কবি-স্বভাবের একটি অত্যন্ত আলোকিত অধ্যায় রচিত হলো। গদ্য যে স্বভাবের জন্য কবিতা হয়ে ওঠে, যাকে আমরা বলি গদ্যকবিতা, তার গতি, স্বাচ্ছন্দ্য, ঝংকার, পেলবতা ও বন্ধনহীন প্রমত্ততার প্রবল ছাপ এই কবিতাগ্রন্থে লক্ষ করা যায়। কবি এহসানুল ইয়াসিনকে খুব নিবিড়ভাবে খুঁজে পাওয়ার জন্য এখানে কেউ নেই কবিতাগ্রন্থটির শরণ নেওয়া যেতে পারে।
এহসানুল ইয়াসিন শূন্য দশকের কবি। সমকালীন কবিদের মধ্যে তাকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। কবিতার বিষয়, ভাষাভঙ্গি, যাপিত জীবন, ইতিহাস - ঐতিহ্যের ব্যবহার পাঠককে দারুণভাবে আলোড়িত করে। সমকাল, মানুষ ও সভ্যতা তার কবিতার অন্যতম অনুষঙ্গ। তিনি যখন দুর্বিনীত সময়ে ভালোবাসার কথা বলেন তখন ভুলে যান না একটি ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। আবার এই সময় নিয়ে যখন লেখেন তখনও ভুলে যান না জীবনের মধুরতার কথা। ফলে পাঠক এবং লেখকের যোগসূত্রে তৈরি হয় নতুন জীবনবোধ। আর এই অভিমিশ্রণকে ধরতে কবি যে ভাষার আশ্রয় গ্রহণ করেন তা একান্তই নিজস্ব এবং মায়াবী। এভাবেই তিনি অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়ে সকলের হয়ে উঠেন। এহসানুল ইয়াসিনের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার চিনাইর গ্রামে। মূলত কবিতা লিখলেও তার গদ্যের হাত অসাধারণ। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তার গল্পগ্রন্থ ফেরাও অথবা ভেঙে ফেল। প্রকাশিত কবিতার বই রাধিকা নগরীর দিকে হেঁটে যাচ্ছি, উত্তরাধিকারের হলফনামা, অহংকারের গোপন চিঠি, কী সুন্দর অন্ধকার এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে এখানে কেউ নেই