এক মলাটে ত্রয়ী উপন্যাসিকার মধ্যে মহিন্দর গুলবানু উপাখ্যান ভারতের রাজস্থান প্রদেশে ঘটে যাওয়া এক অমর প্রেমের কাহিনী যেখানে চিত্রিত হয়েছে ধর্ম, বর্ণ, এবং শ্রেণীবদ্ধ সামাজিক স্তরবিন্যাসে নারীপুরুষের প্রেম আজও বড় অসহায়। সুদূর অতীতে উপজাতীয় রীতিনীতি থেকে সম্মান রক্ষার্থে হত্যার উৎপত্তি হলেও আজও তা প্রকাশ্যে বিরাজমান। ষাটের দশকে একটি পরিবারে বড় হয়ে উঠা চারজন শিশু/কিশোর যারা সম্পর্কে ভাইবোন তাদের নিয়েই লেখা উপন্যাসিকা জোনাকিরা। আচমকা মায়ের মৃত্যুতে অনাহুত এক পরিস্থিতির সম্মুখীন ওরা। তারই বর্ণনা এই উপন্যাসিকার পাতায় পাতায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী কালে সাম্যবাদ, সাম্যবাদী দর্শন এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবাদর্শে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় শ্রেণীশত্রুদের চিহ্নিত করে তাদের নিধনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং তা প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। বাংলাদেশের ধমীর্য়, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনেতিক প্রেক্ষাপটে তা ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়। নিজেদের মধ্যে মতাদর্শের পার্থক্য এবং তা থেকে তৈরি বিভ্রান্তির বেড়াজালে কেন্দ্রিয় চরিত্র রফিক আরও অনেকের মত অপঘাতের শিকার। লেখক তারই মর্মস্পর্শী বিবরণ তুলে ধরেছেন এক বিদ্রোহের দূত এবং মৃত স্বপ্নেরা উন্যাসিকায়।
ফজলে বারীর পুরো নাম এম, এ, কে ফজলে বারী। জন্ম বর্তমান নরসিংদী জেলাস্থ জিনারদীর পাঁচবাগ গ্রামে ১৯৫৩ সালের ২৮ শে অক্টোবর। ষাটের দশকের মধ্যভাগে স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন ফজলে বারীর সাহিত্যিক অভিযাত্রা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ছোটদের আসরে নিয়মিত লেখা ছাপা হতো তাঁর। ক্ষুদে লেখক হিসেবে তখন তিনি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের দুই নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা ছিলেন তিনি। ফলে তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ। দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দুঃখ—কষ্ট তার মনটাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবতীর্কালে ফজলে বারী দীর্ঘকাল লেখালেখি থেকে দূরে সরে ছিলেন। সৃজনশীলতার জগতে প্রত্যাবর্তনে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ অচেনা স্বদেশ ১৯৮২ সনে প্রকাশিত হয়। ফেব্রুয়ারী ২০০৫ এ প্রকাশিত দু’টি উপন্যাস আমার দেহের রক্তে এবং আমার আকাশ আমার বসন্ত তাঁর ব্যক্তিগত জীবন অভিজ্ঞতারই নির্যাস। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রিধারী। বাংলাদেশ বিমানে উড্ডয়ন প্রকৌশলী হিসেবে দীর্ঘ তিরিশ বছর চাকুরি শেষে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী ফজলে বারী নিরন্তর লেখালেখিতে ব্যস্ত। স্ত্রী মুন্না আলিয়া বারী ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সুখী সংসার।