“মাছেভাতে বাঙালি”—এ প্রবাদ বাক্য আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সত্তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের ক্রমবর্ধিষ্ণু জনসাধারণের জন্য নিরাপদ ও সহজলভ্য প্রাণিজ আমিষের যোগানে মৎস্য খাতের অবদান যেমন সর্বজন স্বীকৃত, তেমনি বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্রবিমোচনে মৎস্য খাত অসামান্য অবদান রাখছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব, নগরায়ন, শিল্পায়ন, মনুষ্যসৃষ্ট নানাবিধ কারণে আমাদের জলাশয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। তাই অপার সম্ভাবনাময় মৎস্য খাতের মাধ্যমে দেশের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নের জন্য এ খাতের সকল সম্পদের সর্বোচ্চ ও সহনশীল ব্যবহার প্রয়োজন। মাছ ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সামাজিক পরিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একাধারে যেমন প্রাণিজ প্রোটিনের সংস্থান করে, তেমন বিশ্বের জীববৈচিত্র্য বজায় রাখার জন্যও অপরিহার্য। আমাদের দেশের মৎস্যচাষিরা এই মূল্যবান সম্পদটির চাহিদা পূরণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তবে এই পরিশ্রমকে সহজতর করার জন্য সঠিক জ্ঞাননির্ভর মাছচাষ খুবই প্রয়োজনীয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে মাছের পরিচর্যার পাশাপাশি মাছের বাসস্থান জলজ পরিবেশ অর্থাৎ মাছের বাড়ির গুণমান বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাছ ও মাছের বাড়ির গল্প বইতে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিশদভাবে সহজবোধ্য ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে, তাছাড়া লেখক ৩৩ বছর মাঠ পর্যায়ে মৎস্য উৎপাদনের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে লব্ধ জ্ঞান ও তাঁর ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা প্রাঞ্জল ভাষায় সহজবোধ্য করে এই বইটিতে উপস্থাপন করেছেন যা মৎস্যচাষ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য ও মাঠ পর্যায়ে পেশা—সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য খুবই সহায়ক।
আব্দুস সালাম প্রামাণিক, কৃষিবিদ। জন্ম ১৬ ডিসেম্বর ১৯৬৪। বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার সিংসারা গ্রামে। পড়াশোনা আহসান উল্লাহ স্মারক বহুমুখী কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী সরকারি কলেজ এবং ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে বিএসসি ফিশারিজ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে খামার ব্যবস্থাপক হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরে কর্মজীবন শুরু। সম্প্রতি সরকারি চাকরি হতে অবসর গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। তিনি ২০১৬ সাল থেকে ব্লগে ও ফেসবুকে মৎস্য চাষে পানির গুণাগুণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে লেখালেখি করছেন যা এখনও চলমান আছে। মৎস্য চাষে পানির গুণাগুণ নিয়ে অর্থাৎ পানির রসায়ন (Water chemistry) নিয়ে বাংলা ভাষায় বিশদভাবে লিখা তাঁর 'মাছ ও মাছের বাড়ির গল্প' বইটি অনন্য গ্রন্থ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী ও মৎস্য চাষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।