শাওন শুয়ে আছে। গভীর রাত। অথচ তার ঘুম আসছে না। কী অপরিসীম শূণ্যতা! হৃদয়ের অলিতে, গলিতে খাঁ, খাঁ শূণ্যতা। আশ্চর্য এই শূণ্যতা কিন্তু রীমার জন্য নয়। বরং রীমার কথা ভাবতেই বড্ড বিতৃষ্ণা লাগছে।
শাওন উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল। দক্ষিণের আকাশ আজ খুব স্বচ্ছ। দূর আকাশে ঢাউস আকৃতির রুপালী চাঁদ অসংখ্য তারার ভীড়ে একাই রাজত্ব করছে। পুরো পৃথিবী জুড়ে আলোর মেলা বসেছে। এমন মোহনীয় রাতের সৌন্দর্য একা উপভোগ করা অন্যায়। শাওন মনের অজান্তে সীমার নাম্বারে কল দিল। উচ্চ ভলিউমে মোবাইল বেজে উঠল রুমে। শাওন ভুলেই গেছে সীমার মোবাইলটা যে তার কাছে।
সীমা কার মোবাইল থেকে কল দিয়েছিল, জানা যায়নি। এতরাতে নিশ্চয়ই তাকে কল দেয়া ঠিক হবে না। শাওনের কিছু ভালো লাগছে না। মনের সাথে যুদ্ধ করে সে হেরে যাচ্ছে। বারবার সীমার কথা মনে পড়ছে। গত একবছর মেয়েটা কোনো শূণ্যতা অনুভব করতে দেয়নি। কেমন যেন পুরো অনুভূতি জুড়ে ছিল।
রীমাকে কল দিলে নিশ্চয়ই সীমাকে পাওয়া যাবে। ভাইয়ের বাড়িতে দু'বোন একসাথেই ঘুমানোর কথা। শাওন সাহস করে রীমার নাম্বারে কল দিল।
রিং না বাজতেই রীমা রিসিভ করল।
" কেমন আছো শাওন?"
" আগের মতো। তোমরা কেমন আছো?"
" তোমাকে ছাড়া কেমন থাকতে পারি?"
"গেলে কেন তাহলে? আমি তো যেতে বলিনি।"
" যেতে বলনি ঠিক। তবে আমাদেরকে ছাড়া মনে হচ্ছে বেশ ভালোই আছো।"
" এটা মনে হওয়ার কারণ কী? বাবার বাড়িতে গেছ, তাই সময়-অসময় কল দিয়ে বিরক্ত করিনি।"
" তুমি ফোন দিলে বুঝি আমি বিরক্ত হই?"
" রীমা তুমি আর আগের মতো নেই। ভীষণ বদলে গেছ। অহেতুক সন্দেহ কর, কথায়, কথায় ঝগড়া কর।"
পাশ থেকে কে যেন বলছে,
"রীমা রুপাইর ন্যাপি পাল্টাইতে অইব। হিসু কইরা দিছে।"
" কে আছে তোমার কাছে?"
" কে আর থাকবে? সীমা'পা।"
" ও আচ্ছা। সীমা আপাকে জিজ্ঞেস করতো আমার পেনড্রাইভটা কোথায় রেখেছে? আজ সারাদিনেও খুঁজে পাইনি।"
" আচ্ছা আমি জিজ্ঞেস করে জেনে নেব।"
" এখনই প্রয়োজন, তুমি দাও তো সীমা আপাকে। আমিই জেনে নিচ্ছি।"
রীমা অনিচ্ছাস্বত্তেও সীমার হাতে মোবাইলটা দিয়ে চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে রইল।
ফ্যানের শো শো আওয়াজে ঠিক বুঝা যায়নি শাওন সীমাকে কী বলছে। রীমা শুধু নিরবে লক্ষ্যে করছে সীমার মুখের এক্সপ্রেশন চেঞ্চ হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ রীমা সীমার হাত থেকে ছোঁ মেরে মোবাইলটা নিয়ে কানে ধরল।
" তুমি কি সত্যি চাঁদের আলো দেখনি?"
রীমা ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল,
" চাঁদের আলো দেখার মতো এত রং সীমা'পার মনে নেই। তোমার থাকলে তুমি একাই দেখ। "
ঘটনার আকস্মিকতায় সীমা হতভম্ব হয়ে গেল। এভাবে রীমা মোবাইল কেড়ে নিবে সে ভাবতেই পারেনি।
" এ্যাই আপা! ছোট বইনের জামাইর গলে তোর এত রং, ঢং কিসের রে!"