উনিশ শতক বাঙালির অভিনব উত্থানের কাল। পাশাপাশি সমাজের অভ্যন্তরে অনাচারের একটি চোরা-স্রোতও বহমান ছিল। ভূঁইফোড় নব্যধনী এবং শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একাংশের সুরা ও বেশ্যাসক্তি ছিল; অনেকে রক্ষিতা-পোষণ করতেন, সেকালে যা একধরনের সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করেছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণিকাচর্চা মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এই আদিম পেশার সাথে জড়িত হওয়ার পেছনে আর্থ-সামাজিক কারণ তো ছিলই, তার ওপর ছিল প্রতারণা-প্রবঞ্চনা-প্রলোভনের হাতও। পতিতারা সামাজিকভাবে ঘৃণিত-অবজ্ঞাত হলেও বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে তাঁদের একটি গৌরবময় ভূমিকা ছিল-বিশেষ করে সংগীত ও থিয়েটারে, আরো পরে সিনেমায়। তাঁদের কেউ কেউ শিক্ষিতা ছিলেন; দু’চারজন সাহিত্যচর্চা করতেন; কেউ-বা নিজের জীবনকথাও লিখেছেন। এ বইয়ের রচনাসমূহে পতিতাদের জীবনের অন্তরঙ্গ কাহিনি তাঁদের ঘরোয়া জীবনের চালচিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। নাটকীয় ঘটনায় পূর্ণ এসব কাহিনি কখনো উপন্যাসকেও হার মানায়। এরকম চারটি বই এখানে সংকলিত হয়েছে : নটী বিনোদিনীর আমার কথা (১৩১৯), মানদা দেবীর শিক্ষিতা পতিতার আত্ম-চরিত (১৩৩৬), রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ব্যভিচারী রমেশদা’র আত্মকথা (তারিখবিহীন), নটী সুকুমারী দত্তের আত্মজৈবনিক অপূর্ব্বসতী নাটক (১২৮২)। আবুল আহসান চৌধুরী দুর্লভ-দুষ্প্রাপ্য বই-চারটি দীর্ঘ ভূমিকাসহ সংকলন করেছেন অবিদ্যার অন্তঃপুরে নামে।
আবুল আহসান চৌধুরী জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩ কুষ্টিয়ার মজমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স), এমএ ও পিএইচডি ৩২ বছর ধরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দুষ্প্রাপ্য ও অজ্ঞাত উপকরণ সংগ্রহ, উদ্ধার ও তা ব্যবহার করে থাকেন। তার লালন সাঁই, কাঙ্গাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হােসেন বিষয়ক গবেষণাকাজ দেশ-বিদেশে সমাদৃত। গবেষণায় বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে । প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭০।