বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বিদ্যা বা কসমোলজি গবেষণার অগ্রপথিক বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। কয়েক বছর আগে তাঁর বিস্ময়কর জীবন ও কাজ নিয়ে একটি বই লিখেছিলাম যা বিজ্ঞানপিপাসু পাঠক সাদরে গ্রহণ করেছেন। ২০১২ সালে এই বিজ্ঞানীর সত্তরতম বছর অতিক্রান্ত হলো। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি তাঁর গবেষণা ও অধ্যাপনা জীবন অতিবাহিত করেছেন। ২০১২ সালের ৫-৮ জানুয়ারি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। অতিসম্প্রতি হকিং ‘ফিজিক্স প্রাইজ’ পেয়েছেন যা অর্থমূল্যের বিচারে পৃথিবীর সকল পুরস্কারের চেয়ে বেশি। আমাদের মনে হলো, মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে তিনি কতটা সার্থক, বোধহয় আমাদের বুঝে দেখার সময় এসেছে। মোট ৩৯ জন ছাত্রছাত্রী তাঁর অধীনে গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। একজন ছাত্র অকালে চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে। একজন ছাত্র ভারতীয়, যিনি গবেষণা শেষে আমাদের দেশেই ফিরে এসেছেন। অল্প কয়েকজন বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চার অঙ্গনে নিজেদের ঠিকানা গড়েননি। কিন্তু সিংহভাগ ছাত্র আজ বিজ্ঞানী হিসেবে পৃথিবীর শীর্ষস্থান অধিকার করে রয়েছেন। হকিংকে জানতে ও বুঝতে গেলে তাঁদের বাদ দিয়ে মানুষটিকে আমরা চিনব কেমন করে? এই বইয়ে আমরা তাই হকিং-এর ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার কথা বলেছি। আমি নিশ্চিত, পাঠক বন্ধুরা হকিংকে মানুষ গড়ার এক সেরা কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করবেন। বইটির বিষয়ে একটি কৈফিয়ত পেশ করা জরুরি। আমরা জানি, বিজ্ঞান জার্নালে ‘রেফারেন্স’ লেখার কতগুলি নিয়ম আছে। সেই নিয়ম জার্নালের পরিচালকবর্গ তৈরি করেন। পৃথিবীর সব জার্নালে সেই নিয়ম একরকম নয়। হকিং-এর ছাত্রছাত্রীদের গবেষণাপত্রের বিবরণ আমরা যেমন তাঁদের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেছি, আবার নানা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকেও সংগ্রহ করেছি। যে জায়গায় যেমন করে গবেষণাপত্রের পরিচিতি রয়েছে, আমরা তার বদল ঘটাইনি। বিশ্বসেরা এই বিজ্ঞানী আমাদের কাছে এক বিস্ময় হিসেবে প্রতিভাত, সত্তরতম জন্মবর্ষে তাঁকে তাঁর ছাত্রদের মধ্যেই আমরা দেখতে চাইলাম। দীর্ঘায়ু হোন তিনি। শতবর্ষ অতিক্রান্ত করুন। সদাশয় প্রকাশকের সহযোগিতা অস্বীকার করব কেমন করে? আপনাদের যদি এই বই সামান্যতম ভালো লাগে, এই শ্রদ্ধাগ্রন্থ রচনায় আমাদের পরিশ্রম বৃথা যায়নি মনে করব।