ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের ইতিহাস আটটি অধ্যায়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এখানে আলোচনার মূল উপপাদ্য বিষয় অবশ্য ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র অথবা "ভারত যারা শাসন করত" তারা নয়। আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ভারতের জনগণ, শাসকশ্রেণির সম্বন্ধে তাদের ধারণা, তাদের সংস্কৃতিক সংকট, সামাজিক পরিবর্তন, বিদ্রোহ, আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান এবং সর্বোপরি ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে আসা আধুনিকতার সঙ্গে তাদের বোঝাপড়ার ইতিহাস। এই গ্রন্থে যা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদের প্রবল উপস্থিতির মধ্যে ভারতীয় জাতির অভ্যুত্থানের এবং তার অন্তর্বর্তী সংঘর্ষ ও সংকটের বর্ণময় ইতিহাস। সাম্প্রতিককালে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের ওপর অনেক মূল্যবান গবেষণা হয়েছে। এই সব স্বল্প পরিসরের গভীর গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যগুলোকে সাজিয়ে এবার বড় ছবিটি তৈরি করার সময় এসেছে। ঐতিহাসিক গবেষণার প্রাথমিক উপাদানগুলোর থেকে বহু হাজার মাইল দূরে দক্ষিণ গোলার্ধের দ্বীপবাসী জীবনে আমার পক্ষে এই কাজটি করা সম্ভব বলে মনে হয়েছিল। এই গ্রন্থে একদিকে যেমন ছাত্র এবং সাধারণ পাঠকদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে স্বীকার করা হয়েছে যে একই ঘটনার নানা ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা থাকা সম্ভব। তাই সচেতনভাবেই এখানে আলোচনাকে ইতিহাসচর্চার ও বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাৎ গত দুই দশকে ঔপনিবেশিক ভারতের ইতিহাস সম্বন্ধে যা কিছু নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়ে সেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো এখানে সংযোজিত হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে সমস্ত রকম ব্যাখ্যা এবং বিতর্কগুলোকে শুধুমাত্র বর্ণনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এইসব বিতর্কগুলোকে নতুনভাবে পরীক্ষা করে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রকৃতি এবং বহুত্ববাদী ও বহু স্বরবিশিষ্ট ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান সম্বন্ধে কিছু স্বকীয় সিদ্ধান্তে আসার প্রয়াস রয়েছে এই গ্রন্থে।