‘সাথি তুমি কার’ কাব্যগ্রন্হে ৭১টি কবিতা রয়েছে। কবিতাগুলো পাঠ শেষে পাঠক নিজের অব্যক্ত অনুরাগ বা বয়োসন্ধি ক্ষণের অবুঝ প্রণয়ের স্মৃতি ফিরে পেতে পারেন। অবুঝ প্রণয়ের স্মৃতির সিংহভাগই বিয়োগান্তক বা সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া হৃদয়ের রক্তক্ষরণই নয়। কোনো কোনো কবিতা পাঠকের অনুভূতিকে নাড়া দেবে – মানবপ্রেমের ভাবনাকে মহিমান্বিত করবে। তরুণ কবি মোহাম্মদ দুলাল হোসেনের ‘সাথী তুমি কার’ – কাব্যগ্রন্থের পরতে পরতে নিম্ন মধ্যবিত্ত তরুণের জীবন সংগ্রাম, প্রণয় যন্ত্রণার আকুতি প্রতিবিম্বিত হয়েছে সহজ শব্দ ও বাক্যের উপস্থাপনায়। শৈশবের প্রারম্ভেই মাতৃহারা কবি’র বেড়ে উঠা দাদির কোলে-বুকের আদর স্নেহে। দাদির মায়া আর নিজের যাপিত জীবনের অপূর্ব মিথস্ক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে কবিতায়। জীবনে মাঝে মাঝে হতাশা আসেই। দুলালের জীবনের বাক বদলে যায় কিছু মানুষের সংস্পর্শে। কবি স্বীকারও করেন তার বাল্যশিক্ষা কেন্দ্র রামেশ্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অধ্যাপক ডা. এহসান মাহমুদ ও তার পরিবারের ভূমিকা। আরো স্মরণ করেন স্ত্রী-সন্তান ও বন্ধু স্বজনদের অনুপ্রেরণা ও পাশে থাকার সরব সতত উপস্থিতিকে। মাঝে মাঝে যে হতাশার দেখা মেলে তার কাছে হার স্বীকার করতে নেই – বিশ্বাস করেন কবি দুলাল। তার শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের দিনগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি কাব্যচর্চায় ও লেখনিতে শব্দশৈলীর ভেতরে বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে নিয়েছেন। বেঁচে থাকার সার্থকতা একটাই – শুধু বেঁচে থাকা এবং তা সম্মানের সাথে। মানুষের বিচিত্র সম্পর্ক, দুঃখ-কষ্ট, প্রকৃতি, একাকীত্ব, নিসর্গ তার কবিতার অনুষঙ্গ। একজন সাধারণ মানুষের কবি হয়ে ওঠার পেছনে তার ব্যক্তি চেতনার নান্দনিক বুদ্ধিবৃত্তির উপযোগিতা যথার্থ উদাহরণ হিসেবে বিবেচ্য। গতানুগতিক কবিতা নয় – তার বাইরে এসে কবিতার এক আলাদা পরিকাঠামো তৈরির পথ খুঁজছেন তিনি। নির্বিকার দৃষ্টিতে জীবনকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার দুঃসাহস রাখেন কবি মোহাম্মদ দুলাল হোসেন। একজন পাঠক হিসেবে প্রত্যাশা ‘সাথী তুমি কার’ গ্রন্থটি বিশেষভাবে সমাদৃত হবে পাঠকদের কাছে।