প্যারিস। ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় নগরী। ইউরোপের শিল্প সাহিত্যের অঘোষিত রাজধানী। কবি, শিল্পীদের দ্বিতীয় মাতৃভূমি। আলোকছটায় বর্ণিল, স্বপ্নালু এক শহর। অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘অর্ধেক নগরী তুমি অর্ধেক কল্পনা’ লাইনটা একদম খাপে খাপে মিলে যায় প্যারিসের সাথে। এই নগরীর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে শিল্পকলা আর ইতিহাস। যদিও কান পাতলে আশ্রয়হীন মানুষের দীর্ঘশ্বাসও শোনা যায়। আভিজাত্য আর চাকচিক্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে হতাশা আর অপ্রাপ্তির সাতকাহন। অযুত নিযুত গল্পের সাক্ষী হয়ে স্যেন নদীর পানি বহে নিরবধি। ফরাসি বিপ্লব, নেপোলিয়নের অগ্রযাত্রা, শার্ল দ্য গলের বীরত্ব, বোদলেয়ারের কবিতা, রুশোর দর্শন, রেনোয়ার চিত্রকল্প, রডিনের ভাস্কর্য, ভিক্টর হুগোর সাহিত্য, জিদান কিংবা বেনজেমার ফুটবলযাত্রা সব যেন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে নিয়ে যায় প্যারিস তথা ফ্রান্সকে। শিল্প সাহিত্যের এই শহরে আমি যেন এক পথহারা পথচারীর মতো সবার চোখ এড়িয়ে হেঁটে চলি। পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন বইয়ের দোকান শেক্সপিয়ার এন্ড কোম্পানির বুকশেলফগুলো না ছোঁয়ার অপ্রাপ্তি আমায় কুড়ে কুড়ে খায়। ভার্সাই প্রাসাদের অদেখা আর্ট গ্যালারি আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে। আলেকজান্ডার দ্যুমার থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের সদস্যদের দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান আমি কাপুরুষের মতো প্রত্যাখ্যান করি। আমার মন ছুটে যায় কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল গালিচায়, নরম্যান্ডি উপকূলের যুদ্ধক্ষেত্রে, বার্গ্যান্ডির অখ্যাত গ্রামের মেঠোপথে। প্যারিস যেন আমার কানে কানে বলে যায়, ‘কতটুকু দেখেছো আমার, কতটুকু বাকি?’ আমি উত্তর দিতে পারি না। বসন্তের মনভুলানো রঙিন রাজপথ শুষে নিতে চায় আমার জীবনীশক্তি। আমি আপত্তি করি না। স্যেন নদীর শীতল হাওয়ায় আমার চুল উড়ে যায়। আমি চলতে থাকি জানা কিংবা অজানার পথে। আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ।