বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য সুলভ বিজ্ঞান অভিধানের অভাব বহুদিনের। বিজ্ঞানের কিছু বাংলা বই দুই বাংলাতেই লেখা হয়েছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য। অনেক খুঁজেও একটি চলনসই বিজ্ঞান অভিধান পাইনি। সে অভাব পূরণ ও বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষার সামান্য খেদমত করার ইচ্ছে নিয়ে পাঁচ বছর আগে এ কাজে হাত দিয়েছিলাম। বিজ্ঞানের সামান্য ছাত্র হিসেবে, গত পঞ্চাশ বছর পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে পড়ালেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। তখন বোঝার সুবিধার জন্য বিজ্ঞানের বিশেষ শব্দগুলোর বর্ণনা করার একটি অভ্যেস গড়ে উঠেছিল। সে প্রক্রিয়াই শেষ পর্যন্ত অভিধানে রূপ নেয়। যে শব্দগুলোকে অভিধানে রেখেছি তা এসেছে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক, বিজ্ঞান সাময়িকী ও প্রকাশিত ইংরেজি বিজ্ঞান অভিধান থেকে। বিজ্ঞানের বিশেষ শব্দগুলোর উৎস, বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোর ভাষা। সে কারণে উচ্চারণের সমস্যা স্বাভাবিক। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে, যতটা সম্ভব উচ্চারণসমতা রাখার চেষ্টা ছিল। সর্বক্ষেত্রে তা সম্ভব নাও হতে পারে। পরবর্তী সংস্করণে শোধরানোর নিশ্চয়তা পাঠকের অধিকার বলেই মানছি। দুই বাঙলার বাঙালির ঐকান্তিক চেষ্টা ও আন্তরিক ইচ্ছার ফলে বছর কয়েকের মধ্যেই বিভিন্ন শব্দের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য রূপ দাঁড়িয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। তখন হয়তো ইংরেজি শব্দের আধিক্য কমানো সম্ভবপর হবে। আপাতত এর বিকল্প পাইনি। অভিধানের ভাষা যতটা সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি। এজন্য তৎসম, তদ্ভব ও জটিল শব্দ একান্ত প্রয়োজন না হলে ব্যবহার করিনি। আশাকরি এতে সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য শব্দের বর্ণনা বুঝতে সুবিধা হবে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যা এমনিতেই বেশ কঠিন তা সহজ ভাষায় করা আরো কঠিন। প্রতিটি বর্ণনা রচনায়, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সহজ করে লিখতে বলো যে, সহজ করে যায় না লেখা সহজে। রবীন্দ্রনাথের এ বিজ্ঞবাণী, বারবার মনে হয়েছে। শব্দের বর্ণনা সংক্ষিপ্ত রেখেছি অভিধানের আকার সীমিত রাখার স্বার্থে। বিস্তারিত জানতে হলে অন্যান্য বইয়ের সাহায্য নিতে হবে। পাঠকের সুবিধার জন্য কিছু অভিধানের তালিকা দেয়া হলো। বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে WWW. WIKIPEDIA.ORG ও অন্যান্য বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট (WEBSITE) থেকে। অভিধান লেখার বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বাত্মক সহযোগীতা, গঠনমূলক সমালোচনা ও প্রচুর উৎসাহ দিয়েছেন আমার প্রিয়তমা স্ত্রী পদার্থবিজ্ঞানী ড. রেজিনা চৌধুরি আলম, পদার্থবিজ্ঞানী মামা ও দৈনিক সংবাদের সহ—সম্পাদক ড. মকবুলার রহমান (মৃত) ও ছোটভাই শস্যবিজ্ঞানী ড. এ. এম. শহীদুল আলম। পরিবারের এসকল বৈজ্ঞানিক সদস্যের নিয়মিত আগ্রহ ও সাহস জোগানো এ দুরূহ কাজটি সম্পূর্ণ করতে শেষ পর্যন্ত আমাকে সামর্থ করেছে। এ অভিধানে কাজ সুচারুপে সম্পন্ন করতে উপযুক্ত বাংলা শব্দের গঠনরীতি ও বানান রীতির ব্যাপারে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছেনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান। তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। সীমিত পরিসরের এ অভিধান বাঙালির বিজ্ঞান চর্চায় আগ্রহ সামান্য পরিমাণে বাড়ালেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি। বাংলাভাষার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোনো সদস্য আরো ভালো অভিধান রচনা করবে, এ আশা নিয়েই অপেক্ষায় থাকবো। শামসুল আলম Ph.D. প্রধান সম্পাদক নরওয়াক শহর কানেকটিকাট স্টেট, যুক্তরাষ্ট্র, ২০১৭