জোছনার ঘোরের মতো লাগতে থাকে। মনে হয় আবছা অন্ধকারের এক গোলক ধাঁধায় দাঁড়িয়ে আছে সে। যেন আশেপাশের কোনো কিছুরই আর অস্তিত্ব নেই। জোছনা চোখ বন্ধ করে। গাঢ় বিষাদ মাখা করুণ চাপা কান্নার স্বর জোছনার কানে ভেসে আসে। মনে হয় যেন খুব আপন মানুষের স্বর। অশ্রু জড়ানো আর্তনাদের সেই চিরচেনা স্বর। জোছনার চোখের সামনে তার মায়ের মুখটা ভেসে উঠে। যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মায়াবী মুখমণ্ডলে গভীর বিষাদের ছায়া। সেই ছায়া গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়। যেন জোছনার চোখের সামনে তার অপরূপ সুন্দরী মায়ের চেহারা বদলে যেতে থাকে। ফর্সা মুখমণ্ডলে জমাট বাধা কালচে রক্ত, মলিন নিষ্প্রাণ শরীর, গলায় ফাঁসির দড়ির মোটা দাগ জোছনার চোখে ভেসে উঠে। জোছনার ঠোঁট দুটি কেঁপে উঠে। নিজের অজান্তে জোছনা অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে 'মা'। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই জোছনা দেখে বেশ কয়েকজন লোক তার পেছনে দাঁড়ানো। তাদের প্রত্যেকের মুখ গামছা দিয়ে আঁটসাঁট করে বাঁধা। জোছনা কিছু বুঝে উঠার আগেই একজন তার গলা চেপে ধরে। বাকিরা জোছনার হাত, পা ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেলেন। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে রুস্তম জোছনার গলা চেপে ধরেন। জোছনা একটুও নড়তে পারে না। হঠাৎ জোছনার বাঁচতে ইচ্ছে করে। প্রচণ্ড ইচ্ছে করে তার মেয়ের জন্যে বেঁচে থাকতে, মজিদ মিয়ার জন্যে বেঁচে থাকতে। শেষ মুহূর্তে বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে জোছনা প্রাণ ত্যাগ করে।