এসএসসি পাস করে ১৯৮২ সালে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়েছি। তখন সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট আমার বাংলাদেশ। দেশে গণতন্ত্র নাই। রাজনীতি নিষিদ্ধ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায় চাপা উত্তেজনায় দেশ। ছাত্র রাজনীতি দানা বেঁধে উঠছে। সমস্ত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এক হচ্ছে। ভেতরের প্রতিবাদী মন যৌবনের তরঙ্গে কেঁপে কেঁপে উঠছে। রাজশাহী কলেজ তখন উত্তরবঙ্গের আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রভূমি। পাশেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী কলেজে তখন প্রবাদ প্রতীম ছাত্রনেতা জেড এম জগলুল আহমেদ আক্তারের মতো নেতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান জননেতা তখনকার তারুণ্যের প্রতীক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি আর জাহাঙ্গীর কবীর রানারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমার তারুণ্য সেই মিছিলের পক্ষেই সামিল হলো। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে গেলাম। তখন জয় বাংলা স্লোগান দেয়া অনেক সাহসের ব্যাপার ছিল। সকল বিরোধী দলের টার্গেট তখন ছাত্রলীগ। আমরা যেন স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘু। আমাদের যে কোনো প্রোগ্রাম বা মিছিলে তাদের হামলা করা যেনো এক উৎসবের বিষয়। সেই পরিবেশে হয়ে গেলাম সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী। শারীরিক অক্ষমতার কথা ভুলে, পুলিশি নির্যাতনের কথা ভুলে, বিরোধীদের বিরোধের কথা ভুলে রাজপথকেই বেছে নিলাম। সমস্ত স্লোগান তখন কবিতার পঙ্ক্তি হয়ে আকাশে বাতাসে উড়াতে লাগলাম। তখন ড. নীহার কুমার সরকারের ‘ছোটদের রাজনীতি’ ও ‘ছোটদের অর্থনীতি’ পড়লাম। পড়লাম, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘যে গল্পের শেষ নেই’। এই তিনটি গ্রন্থ পাঠ যেনো আমাদের পাঠের তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিল। আমরা রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রাথমিক ধারণা নিলাম। মানুষের বিবর্তনের ধারা জানলাম।
Title
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবঃ শোষণহীন মানবিক মুক্তির দর্শন