সোমেশ্বর পাঠকের আদি নিবাস ভারতের কান্যকুব্জ। ‘তিনি বিদ্বান, বুদ্ধিমান, বলিষ্ঠ এবং ধর্মপরায়ণ ছিলেন।’ তাঁর নেশা ছিল তীর্থস্থান ভ্রমণ। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কামরূপ ভ্রমণ শেষে একদল সন্ন্যাসীর সাথে বর্তমান নেত্রকোণার দুর্গম অঞ্চল দিয়ে তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন নিজ বাসভ‚মে। একদল ধীবর এসে কাকুতিমিনতি করে বৈশ্যা ডাকাতের অত্যাচার থেকে তাদের রক্ষা করতে। সাধুসঙ্গ প্রধান সোমেশ্বরকে বলেন, তোমার শরীরে রাজলক্ষণ স্পষ্ট। তুমি এখানে থেকে যাও। রাজ্য প্রতিষ্ঠা করো। তিনি একটি অশোক বৃক্ষচারা রোপণ করে বলেন, এ বৃক্ষটি যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিন তোমার রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটবে। বৃক্ষটির মৃত্যু হলে রাজ্যের পতন শুরু হবে। ধীবরদের নিয়ে সোমেশ্বর পাঠক বৈশ্যাকে যুদ্ধে পরাজিত করে প্রতিষ্ঠা করেন রাজ্য। আসাম থেকে তিনি দুর্ধর্ষ হাজংদের এনে রাজ্যরক্ষার কাজে নিয়োজিত করেন। তাদের পরিবার-পরিজনদের বসবাসের জন্য দান করেন খাজনাবিহীন বিস্তর ভ‚মি। তাঁর চতুর্থ উত্তর পুরুষ রঘুনাথের রাজত্বকালে অশোক বৃক্ষটি মরে যায়। শুরু হয় রাজ্যের পতন। তারও অনেক পরে হাজংদের জমির ওপর টঙ্ক ধার্য করা হয়। তারা তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ওপর নেমে আসে রাজপরিবারের অত্যাচার, নিপীড়ন। এই পরিবারেরই সন্তান কমিউনিস্ট মণি সিংহ। এই অন্যায় ও শোষণের প্রতিবাদে হাজংদের পক্ষে টঙ্কের বিরুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। ‘টঙ্ক’ উপন্যাসে হাজংদের অস্তিত্বসংকট ও সংগ্রামের চিত্র সুনিপুণভাবে রূপায়ণ করা হয়েছে।
সমীর আহমেদ : ঢাকা জেলার দোহার। উপজেলায় ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি কৃষক পরিবারে তার জন্ম। বাবা চান বেপারী এবং মা হাজেরা বেগম; উভয়েই প্রয়াত। গ্রামের স্কুল ও কলেজে পড়াশােনা। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। বর্তমানে সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা ও সম্পাদনাসহ প্রকাশিত গ্রন্থ ১৯টি। প্রথম উপন্যাস ‘মরা কটালের জোছনা’র জন্য অধুনালুপ্ত আজকের কাগজ সাহিত্য পুরস্কার অর্জন। ছােটগল্পের জন্য দেশের বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন দ্বারা সম্মানিত হয়েছেন। চিন্তাভাবনায় সতত প্রগতিশীল। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা আমাদের অস্তিত্বের অংশ। জাতিসত্ত্বার পরিচয়। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নয়; মানবিকতাই উত্তম ধর্ম।