ঝর্না রহমান, ‘জিনিয়াস’ শব্দটিও আপনার জন্য যথেষ্ট নয়। এ পর্যন্ত আপনার ৪০টি ধাঁধাকাব্যের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটেছে; আর এ থেকে বোঝা গেছে যে, আপনি যেকোনো বিষয় নিয়ে অবলীলায় কাব্য রচনা করতে পারেন। আপনার দৃষ্টির সূ²তা আর বোধের গভীরতা যেকোনো কিছুকে তার বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গÑদুদিক থেকেই সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয় অভিনব শিল্প সুষমায়। তাই নিষ্প্রাণ চিরুনিও সুদন্তী নারী হয়ে যায়। কী চমৎকার অভিনব সব উপমা-উৎপ্রেক্ষা আর তুলনা! চিত্রকল্প সৃষ্টি করতে গিয়ে কাব্যের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের এমন অপরূপ ছবি আপনি ফুটিয়ে তুলেছেন যে, বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। “চুম্বনে, দংশনে আর লেহনে মাতাল” কমলার স্বাদ আস্বাদনের এমন পঙ্ক্তি পাঠকমনকে সত্যি মাতাল করে তোলে। “দানা দানা হীরক দানা নানা বরণ তার/ তপ্ত জলে ডুব দিলে হয় রূপের গুল বাহার।” চাল থেকে ভাত হওয়ার এর চেয়ে সুন্দর কাব্যিক রূপ আমার অজানা। “দানার দানে ধন্য সবাই রাজা বা ভিখারি/একটি দানার জন্য লাগে যুদ্ধ মহামারী।” পরিসমাপ্তিতে কী দুর্দান্ত মেসেজ! চৌদ্দ চরণের এই ধাঁধাকাব্যটি যেন ঐতিহ্যের এক অনন্য গল্প হয়ে উঠেছে। সূচনা আর সমাপনে ধাঁধা তার নিজস্ব ঘরানাকে ধরে রেখেও সাথি করে নিয়েছে ক্ল্যাসিক কাব্যালংকারের বহুমাত্রিক সৌন্দর্য। কী নেই এই ধাঁধা কাব্যে! রঙে, রসে, রূপে, অভিনব চিত্রকল্পে আর বুদ্ধিদীপ্ত বাগ্বৈদগ্ধ্যে অপূর্ব সুন্দর এ শিল্পসৃষ্টি। ধাঁধার জগৎকে আপনি সাজালেন ভিন্ন মাত্রায়, ভিন্ন আঙ্গিকে। আপনাকে অভিনন্দন। আয়েশা আক্তার সিনিয়র শিক্ষক, বাংলা আরমানীটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা
চল্লিশ বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত একুশে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় ছোটগল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, কবিতা, ভ্রমণ-শিশুসাহিত্য, সবক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ। গল্পকার হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। পেশাগত জীবনে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী। বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ লাভ করেন। জন্ম ২৮ জুন, ১৯৫৯, গ্রামে বাড়ি : কেওয়ার, মুন্সিগঞ্জ।