ভূমিকা প্রস্তর যুগে আগুন আবিষ্কারের পর থেকে রন্ধনপ্রক্রিয়ার উদ্ভব হয়েছে। সেই থেকে মানুষের রসনাবিলাসের জন্য যুগ যুগ ধরে এই প্রক্রিয়ায় এসেছে নানা আবর্তন ও বিবর্তন। সনাতনীভাবে এই প্রক্রিয়ার প্রধান কলালকুশলী হচ্ছেন নারীগোষ্ঠী। যুগ যুগ ধরে রান্না কর্মটি এক নারীর কাছ হতে অন্য নারীর কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে। প্রতিটি হস্ত বদলের পরই এই কর্মের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে এবং রসনাবিলাসে নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। তাছাড়া, সময়ের পরিবর্তনেও এই কর্মটির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে। তাই রান্না একটি চলমান প্রক্রিয়া। রান্না আজ কেবল নারীর রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ নেই। এর সঙ্গে আজ যুক্ত হয়েছে একটি অর্থকরী মাত্রা এবং পরিণত হয়েছে একটি ব্যবসায়ে। তবে বাণিজ্যক্ষেত্রে। নারী তার এই সনাতনী কর্মটি আর তার নিজের হাতে ধরে রাখতে পারেননি।। অনেকক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গেছে, নারী যেন ইচ্ছে করেই পুরুষের হাতে ছেড়ে দিতে চেয়েছেন এই কর্মকাণ্ডটি। কারণ, তারা মনে করছেন নারীর ক্ষমতায়ন, যা অর্জন করার জন্য আজ সারা পৃথিবীর নারীগোষ্ঠী লড়াই করে চলেছেন, তা বহুলাংশে নির্ভর করছে তাদের সনাতনী কাজগুলি হতে মুক্তি পাওয়ার ওপর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, রান্না কর্মকাণ্ড ও রান্নাঘর নারীর ক্ষমতায়নের একটি শক্তিশালী উৎস। রান্নার ওপর পরিবারের সদস্যদের মনের আনন্দ ও সন্তুষ্টিই কেবল নির্ভর করে না, নির্ভর করে তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাও। পরিবার নিয়ে যেহেতু সমাজ গঠিত হয় এবং সমাজ নিয়ে যেহেতু একটি দেশ গঠিত, সেহেতু পুরো দেশের জনগণের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করছে রন্ধন কর্মকাণ্ডের ওপর। এই সত্য থেকে অনুমান করা কঠিন নয় যে, রান্না ও রান্নাঘর একজন নারীর কত শক্তিশালী ক্ষমতার উৎস। এই উৎস থেকে নারী যে কেবল সামাজিক ক্ষমতাই অর্জন করতে পারেন তা নয়, এই উৎস থেকে তিনি অর্থনৈতিক ক্ষমতাও অর্জন করতে পারেন। যেহেতু এই কর্মযজ্ঞ আজ পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মোট বাণিজ্যের এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে, তাই নারীগোষ্ঠীকে সচেষ্ট থাকতে হবে যাতে তিনি তার এই সনাতনী একচেটিয়া কর্মটিকে তার পূর্ণ আয়ত্বে রাখতে পারেন এবং এর বাণিজ্যিকীকরণের পূর্ণ ফল ভোগ করতে পারেন। লক্ষ করা গেছে, রন্ধনপ্রক্রিয়া যত আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে এবং স্বল্প সময়সাপেক্ষ হয়েছে, ততই গৃহের পুরুষ সদস্যরা গৃহের রন্ধনকাজে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নারীগোষ্ঠীর সচেষ্ট হতে হবে যাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গৃহের রন্ধনকর্মটিকে স্বল্প শ্রমসাধ্য করা যায় এবং একই সঙ্গে এই কর্মের পরিবেশ রাঁধুনীবান্ধব করা যায়। প্রতিটি দেশের রন্ধনপ্রক্রিয়ার একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য থাকে যার সৃষ্টি হয়েছে.