ফকির সমছুলের মুর্শিদ নয়ান ভানুকে দেখার সুযোগ হয়নি কখনো, কিন্তু এই তিন শিষ্যকেই কাছে থেকে দেখেছি। মাসিং নদীর তীরে, আশিকের রত্নসমগ্র ও যাওয়ার পথের পাণ্ডুলিপির প্রাথমিক পাঠ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন পল্লিচিকিৎসক সুজিত দেবনাথ। সুজিত নিজে ভক্তিমূলক গান লেখেন, ধর্মীয় সভায় সেগুলো গাওয়া হয় বলেও শুনেছি, জয় গুরু বাউল সঙ্গীত ও হলনা আপন চেনা নামে দুইটি বইও বেরিয়েছে, ফকির সমছুলকে তিনি উস্তাদরূপে গ্রহণ করেছিলেন। নিয়মিত সাদা কাপড়-পরা জমির সাহেবকেও দেখেছি বহুদিন। একবার ফোনকল পেয়ে সিলেটে ফকির সমছুলের খোঁজ করতে গিয়ে হঠাৎ সংসার বাঁধার পর শিষ্য অধরাকেও দেখে এসেছি একদিন। এটি ছিল তাঁর শিষ্য অধরার দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের কয়েক দিন পরের ঘটনা, উদ্ধৃত গানে কেন তাকে ‘চঞ্চল মনা ঘোড়াটা তোমার’ বলেছিলেন তা বোঝা যায়। তাঁর এই গানগুলো দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় শিষ্যদেরকে লক্ষ্য করে লেখা গুরু-দায়িত্বের যথার্থ নিদর্শন। এর বাইরেও এই বইয়ে এমন কিছু গানও রয়েছে যার রূপকের আড়ালে একসময়কার বিশেষ বাস্তবতাকে যেমন তীব্রভাবে মনে করিয়ে দেয় তেমনই এর রচয়িতার মূল বক্তব্যকেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপস্থাপিত করে। আমরা জানি একসময় দেশের নানা অঞ্চলের দরিদ্র মানুষ দিনবদলের আশায় বিদেশে যাওয়ার জন্য তার একমাত্র সহায়-সম্বল জায়গাজমি বেচে দিয়ে সেই টাকা দালালদের হাতে তুলে দিত। টাকা কখনো কাজে লাগত, কখনো লাগত না; দেখা যেত টাকা হাতে নিয়ে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে বিমানে তুলে কাক্সিক্ষত জায়গার বদলে দেশের অন্য কোনো জায়গায় নামিয়ে দিয়ে নানা অজুহাত তুলে প্রতারণা করত। দীর্ঘকাল থেকে চলে আসা এ এক কঠিন বাস্তবতা। আজ থেকে শত বছর আগের পুলিশ-রিপোর্টেও যেমন এমন প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে, তেমনই এখনো তা চলমান দু-দিনের দুনিয়ায় এসে অসাবধানতার কারণে সবকিছু খুইয়ে বসে শেষমেশ এই অবস্থায়ই তো পড়ে মানুষ।