প্রায় দেড় হাজার বছর আগের একজন রোমান দার্শনিক বোয়েথিয়াস। বোয়েথিয়াস যখন এই বইটা লিখতেসেন তখন তিনি নির্বাসনে, মাথার উপর মৃত্যুর পরোয়ানা ঝুলতেসে। এমন দুরবস্থায় শোকে আত্মহারা হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমান যুগে দর্শনের প্রতি আমাদের নজর অনেকটা বদলায়ে গিয়া থাকলেও, আদিতে দার্শনিকরা মনে করতেন দর্শনের প্রধান কাজ হইলো মানুষরে সকল বাধা-বিপত্তির সামনে অটল থেকে একটা সৎ ও ভালো জীবন যাপন করতে শেখানো। বোয়েথিয়াসের এই বইটা মূলত দুঃখের মুখে নিজেরে নিজের অর্জিত জ্ঞান স্মরণ করানোর একটা প্রয়াস। বইটার শুরুতে দর্শনের দেবী দেখা দেন বোয়েথিয়াসরে। জানান, দৈহিকভাবে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নির্বাসিত হওয়া যতটা না দুঃখের, তারচেয়ে বেশি মর্মান্তিক যখন কোনো মানুষ মানসিকভাবে নিজের সত্তার থেকে, প্রকৃত ঘর থেকে নির্বাসিত হয়ে পড়ে। তারে স্মরণ করান যে, ভাগ্য মানুষরে যা দেয় তার কোনোটাই মানুষের নিজের না। মানুষের একমাত্র অর্জন হইলো তার জ্ঞান, যারে সে নিজের দাবি করতে পারে। তারপর বাকিটা বই আগায় অসংখ্য সূক্ষ্ম ও কাব্যিক অ্যালিগোরি আর মেটাফোরের মাধ্যমে নৈতিকতা, ঈশ্বর, নিয়তি ইত্যাদি বিষয়ে দুইজনের আলাপের মধ্য দিয়ে। প্লেটোর সংলাপ, পুরানো গ্রিক নাটকের মত সেই সংলাপের মাঝে মাঝে কাব্যিক কোরাস, আবার অ্যারিস্টটলীয় যুক্তি—প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য ও দর্শনের সকল কলকব্জার নিপুণ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আগাইতে থাকে তাদের দার্শনিক আলোচনা।