অন্ধকারের গহন থেকে হঠাৎ জ্বলে ওঠা কোনো জোনাকির আলো আমাকে বিমোহিত করতো। জ্বলতে জ্বলতে জোনাকিটা আবার অন্ধকারেই মিলিয়ে যেতো। কিন্তু আমার অন্ধকার দেখা মিলাতো না। তখনও শেষ হতো না অন্ধকার দেখার ক্ষণ! তখনও চেয়েই থাকতাম। দূরে কোথাও রাতজাগা কোনো অচীন পাখির শব্দে আনমনা হওয়ার গল্প আমাকে ভাবিয়ে দিতো। সেই আনমনা হয়ে বসে থাকার ঘটনা মনে পড়ে আজও। যখন বৃষ্টির দিন যখন বর্ষার ঘন বর্ষণ! অন্ধকারে বৃষ্টি ঝরার শব্দ একধরণের মন উতলা করা মুর্ছনা ছড়িয়ে দিতো। জানালার পাশে বৃক্ষের পাতায় বৃষ্টি ঝরার শব্দ ঝংকার তুলতো! এভাবে শীতরাতে কুয়াশার চাদর মোড়ানো প্রকৃতিও আমাকে ভীষণ ভাবে টানতো। ফসলের মাঠ জমে থাকতো কুয়াশার হিমানীতে। মাঠের পর বিল-ঝিল। সেই বিলের নিঝুমতা এখনও কানে বাজে। প্রকৃতির নৈশব্দেরও একটি অদ্ভুত শব্দ আছে। কান পাতলেই শোনা যায় সেই শব্দের বিস্ময় সুর। বেলাই বিলের নির্জন সেই প্রকৃতি আজও টানে আমাকে। সেই পাখির কুজন সেই হঠাৎ টুপ করে জলে ডুবে মাছ ঠোঁটে তুলে মাছরাঙাটির ছুটে যাওয়া। এসব দৃশ্য একাকী দেখতেই ভালো লাগতো আমার। এককথায় প্রকৃতি আমার ভেতর-জগৎকে বিনি সুতোয় বেঁধে রেখেছে বিস্ময়কর ভাবে। ফলে লেখালেখির শুভ সুচনা হলো যখন, জীবন ও প্রকৃতিই বিষয় হয়ে উঠলো আমার। ফেলে আসা জীবনের অভিজ্ঞতা, যা জন্ম নিয়েছে প্রকৃতির সান্নিধ্যে, সেই দেখা থেকেই ভাবনার আকাশ ডানা মেললো। সেই ভানাকেই ভাষা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে এ বইতে।