রাসুল (সা.) বলেন, কোনো এক ব্যক্তি কোনো এক মরু উদ্যানে উপস্থিত ছিল। হঠাৎ সে একখণ্ড মেঘমালা থেকে এ নির্দেশ শুনতে পেল, কে যেন বলছে যে, অমুক ব্যক্তির ফল বাগানে পানি বর্ষণ কর। এ নির্দেশের সাথে সাথে সেই মেঘমালাটি চলতে লাগল এবং একটি খরা ভূমির উপর এসে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করল। তারপর বৃষ্টির সমস্ত পানি একটি নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলল। সে লোকটি পানির স্রোতের অনুসরণ করল। কিছু দূর গিয়ে সে দেখতে পেল যে, এক ব্যক্তি তার ফল বাগানে কোদাল দ্বারা আইল বেঁধে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বাগানের এদিক ওদিক পানি ছড়িয়ে দিচ্ছে। লোকটি বাগানের মালিককে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! আপনার নাম কি? উত্তরে লোকটি তার নাম বলল। দেখা গেল যে, এ নামটিই সে মেঘের মধ্য থেকে শুনেছিল। বাগানের মালিক তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! আপনি আমার নাম জিজ্ঞেস করছেন কেন? লোকটি বলল, যে মেঘ থেকে এ পানি বর্ষিত হয়েছে, তার মধ্য থেকে আমি একটি নির্দেশ শুনতে পেয়েছি। যাতে আপনার নাম উচ্চারণ করে বলা হয়েছে যে, অমুকের ফলবাগানে পানি বর্ষণ কর। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন হল যে, আপনি এ বাগানে কি কাজ করেন, যার ফলে আল্লাহ ভামলার এত প্রিয়ভাজন হতে পারলেন? বাগানের মালিক বলল, আপনি যখন জিজ্ঞেস করলেন, ভবে তো আপনার অনুরোধ রক্ষার্থে বলতেই হয় আমি এ বাগানের সমস্ত উৎপন্ন ফসলের হিসাব করে তার এক তৃতীয়াংশ দান করে দেই এবং এক তৃতীয়াংশ আমার নিজের জন্য ও আমার পরিবার-পরিজনের জন্য সংরক্ষণ করি। আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ পুনরায় এ বাগানের কাজে বায় কর। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত, পৃ. ১৬৫)
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।