জন্মগত ভাবে বা বৈশিষ্ট্যগত কারণে- যেভাবেই বলি, মানুষ স্বাধীনতাকামী। স্বাধীনতার বিকাশই মানুষের জীবনের মূল নির্যাস। আধুনিক জমানায় যখন রাষ্ট্রের জন্ম হলো, তখন এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা পেলো, যে স্বাধীনতাটুকু রাষ্ট্রের কাছে বন্ধক রাখলে, সে তার আইন এবং নাগরিকদের সঙ্গে করা সামাজিক চুক্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই স্বাধীনতার আরও বিকাশ ঘটাবে। নিষ্কন্টক করবে। সামগ্রিক অর্থেই। ফলে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের বলে দেয় কি করা যাবে, আর কি করা যাবে না। এই চৌহদ্দি বেধে দেয়ার মধ্য দিয়ে সে বোঝাতে চায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীনতা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর কল্যান প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র সদা তৎপর। কিন্তু আসলেই কি তাই? রাষ্ট্রের বেধে দেয়া চৌহদ্দির উনিশ বিশ হলে নাগরিকের ওপর যেমন খড়গ নেমে আাসে, তেমনি রাষ্ট্র যদি কখনো তার নাগরিকদের সঙ্গে করা চুক্তি ভঙ্গ করে-তখন তার জবাবদিহিতার জায়গা কোথায়? আবার সমাজে বাস করা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার অনেক কাঠামো থাকলেও তা কতটা কার্যকর। অথবা সব কাঠামো বাদ দিয়ে বিবেকের যে আদালত ছিল, চিন্তা করে দেখলে বোঝা যায়, মনে প্রশ্ন আসে, কোথায় সেই আদালত, কোথায় বসবেই বা সেই কাঠগড়া? ফলে যে আশায় মানুষ তার স্বাধীনতাটুকু বন্ধক রাখলো, আর কাঠামোর মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা গুটিকয় ক্ষমতাবানেরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সেই আমানতের খেয়ানত করলো, গাফিলতি করলো, সেই হিসাব মেলাবে কে? প্রথিতযশা সাংবাদিক বোরহানুল হক সম্রাট সেই চেষ্টাটাই করেছেন। সাংবাদিকেরা নাকি সমাজের আয়না। সেই আয়না হওয়ার কাজটি করতে যেয়ে তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে অর্জন করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতার, কখনো সম্মুখীন হয়েছেন রুঢ় বাস্তবতার। সেই ঝুলি থেকে আমাদের জন্য তুলে এনেছেন একের পর ঘটনা প্রবাহ। সাথে যোগ হয়েছে তাঁর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন উপলব্ধি। এই বইটিকে মোটা দাগে নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের করা চুক্তির স্বরুপসন্ধানও বলা যায়। যেখানে উঠে এসেছে দেশের প্রচলিত ব্যবস্থার ভেতরে ঘুন পোকার মত লুকিয়ে থাকা অনিয়ম অনাচারের কথা। রয়েছে অযাচিত আশা। আছে সমাধানের প্রত্যাশাও। আমরা মনে করি, এই দেশটা নিয়ে যারা ভাবেন, তাঁদের জন্য বইটি চিন্তার নতুন নতুন দুয়ার খুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। উন্মোচিত হবে নতুন নতুন চিন্তার বিকাশের ও গবেষণার পথ।
গ্রামের বাড়ী কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার শোমসপুরে। জন্ম বাবার কর্মস্থল সূত্রে রাজবাড়ী জেলার রেল কলোনীতে। ২ বোন ৫ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। ছোট বেলা থেকেই লেখালেখির হাতে খড়ি ‘অনির্বাণ’ লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। প্রথম কবিতার বইটি হারিয়ে ফেলেন ঢাকায় আসার আগেই। ১৯৯৮ সালে ভোরের কাগজ ছেড়ে আসা যে দলটি ‘প্রথম আলো' গড়ে তোলেন, সেই দলের রিপোটিং টিমের কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। প্রথম আলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে যাত্রা শুরু। এরপর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে আরটিভির শুরুতে কাজ করেন। ২৫ বছরের আনুষ্ঠানিক সাংবাদিকতায় দেশের প্রথম নিউজ চ্যানেল সিএসবিতে সিনিয়র রিপোর্টার, দ্বিতীয় নিউজ চ্যানেল এটিএননিউজে বিশেষ প্রতিনিধি ও চীফ রিপোর্টার, সময় টিভিতে চীফ রিপোর্টার, নিউজ টোয়েন্টিফোরে বার্তা সম্পাদক, দেশ টিভিতে চীফ নিউজ এডিটর, আমাদের বার্তা’য় প্লানিং এডিটর ও মোহনা টেলিভিশনের বার্তা প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৭ সাল থেকে সংগঠনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন বিজিসিতে প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সদস্য। কর্মসূত্রে ভ্রমণ করেছেন ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, বেলারুশ, স্পেন, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে। তবে সবচেয়ে পছন্দ নিজের দেশ ঘুরে দেখা, যে কারণে ৬৪'র মধ্যে ৬২ জেলায় নির্বিচারে পা রেখেছেন। স্ত্রী রুবী আহমেদের সাথে পরিণয় প্রথম আলো'তে কাজের সূত্রে। দুই সন্তান সম্প্রীতি ও সুহৃদ হক।