১৯৭১ । আমাদের সবচেয়ে আবেগময় ও অশ্রুদগ্ধ এবং গৌরবোজ্জ্বল সময় । এদেশের মানুষের ত্যাগ আর রক্তে লেখা হয়েছে সেই ইতিহাস। তবে তা কেবল ইতিহাসের কঠিন বাস্তবতার মধ্যেই আটকে থাকেনি। বাংলা ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য নতুন একটি অধ্যায় সূচনা করেছে। যেমন ভাষা আন্দোলনের সাহিত্য। তথাপি, ওই বিষাদময় বেদনাবিদ্ধ ও বিপন্নতার সব চিত্র কি উঠে এসেছে আমাদের সাহিত্যে? সব কিছুই কি আমাদের রুপালি কলমে রূপায়িত হতে পেরেছে? ফলে অসামান্য ভার নিয়ে, অশেষ অপ্রাপ্তি নিয়ে আমাদের সাহিত্যস্রষ্টারা লিখে চলেছেন সেই সব আত্মঅভিজ্ঞতা। কারো সেসব প্রত্যক্ষ ও উজ্জ্বল স্মৃতি, আবার কারো রচনায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিবিধ ইতিহাস ও শ্রুতিকথার স্মারক হয়ে রূপান্বিত হয়ে চলেছে জাতির ওই গৌরবদীপ্ত কথকতা । ইমতিয়ার শামীম মুক্তিযুদ্ধের ওই প্রজন্ম, যিনি বালকের ভয়ার্ড-বিস্ময়মাখা চোখে প্রত্যক্ষ করেছিলেন রক্তপাতময় দিনগুলো। সেসব স্মৃতি-বিস্মৃতিময় বিষাদবিদ্ধ সময়ের গল্প স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও তাঁর মগজে অদৃশ্য এক ঘুণপোকার মতো কাটাকুটি করে চলেছে নিরন্তর। তবে গল্প তো কেবল বাস্তবের অনুপুঙ্খ উদ্বোধন নয়, তাতে মেশে শিল্পের নানান কারিকুরি। ইমতিয়ার শামীম সেই শিল্পনিরীক্ষায় পূর্বাপর মনোযোগী। মানব মনস্তত্ত্বের সঙ্গে সমাজ-রাষ্ট্রের নানান অসহনীয় চলচ্ছবি তিনি মিশিয়ে দেন গল্পের নৈর্ব্যক্তিক শরীরে। ফলে সেগুলো হয়ে ওঠে শিল্পের নির্দিষ্ট একটি তলের সঙ্গে অসহিষ্ণু বাস্তবের স্তরবহুলতার সংবেদ। সোনালু সোনালু যত স্বপ্নদাহ সংকলনের গল্পেও লেখকের চেতনাপ্রবাহে জেগে থাকে আশ্চর্য ও অনির্বাপিত এক চোখ।
জন্ম : ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ ; সিরাজগঞ্জের সলপ জনপদের রামগাঁতী গ্রামে। মা : হামিদা সুলতানা। বাবা : চৌধুরী ওসমান। পেশা : সাংবাদিকতা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : এমএসএস [সমাজ বিজ্ঞান]; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ : ডানাকাটা হিমের ভেতর (উপন্যাস, ১৯৯৬)। অন্যান্য উপন্যাস : আমরা হেঁটেছি যারা, চরসংবেগ, অন্ধ মেয়েটি জ্যোৎস্না দেখার পর, মোল্লাপ্রজাতন্ত্রী পবনকুটির, তা হলে বৃষ্টিদিন তা হলে ১৪ জুলাই, আমাদের চিঠিযুগ কুউউ ঝিকঝিক, মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সঙ্গীতানুষ্ঠান, নীল কৃষ্ণচূড়ার জন্মদিনে, শাদা আগুনের চিতা, অন্তর্গত কুয়াশায়, যারা স্বপ্ন দেখেছিল। স্বীকৃতি : ‘মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সংগীতানুষ্ঠান’ গ্রন্থের জন্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০১২), লোক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), জীবনানন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪), ‘শীতের জ্যোৎস্নাজাবলা বৃষ্টিরাতে’ গ্রন্থের জন্যে প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল গ্রন্থ পুরস্কার (১৪২১), কিশোর উপন্যাস ‘পাতার বাঁশি বাজে’র জন্যে শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৪২১) এবং কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০২০)।