সাহিদা আক্তার জীবন খাতায় কাব্য লেখেন, কাব্য পাতায় জীবনের প্রতিচ্ছবি আঁকেন। মেধাবী লেখকের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের বিচক্ষণতায় বাস্তব ও কল্পনা মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠে জীবনের গল্প। যে গল্পগুলো সবার জীবনের একান্ত নিজের কথা। জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাই লেখকের লেখার মূল অনুসঙ্গ। এমন কথার হাত ধরেই জীবন কখনো হয়ে উঠে কবিতার মতো সুন্দর, কখনো বা গল্পের মতো আবেগপ্রবণ কিংবা উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। লেখক সাহিদা আক্তার সাহিত্যের সকল শাখায় অবাধে বিচরণ করতে কবিতা, গল্প, গান লিখে বর্তমানে উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেছেন। তার প্রকাশিত প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অন্তলীনা’ দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্ন তারার সাথী’। তিনি ১৯৮৬ সালের ১৫ এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার হিজুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাহিদা আক্তার মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলায় সম্মানসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। ছোটবেলা থেকেই সাহিদা আক্তারের সাহিত্যের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল। লেখালেখি তাঁর মননশীল ও চিন্তাশীলতার ফসল বিধায় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে লিখে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে লেখক সাহিদা আক্তার অন্য পাঁচজন লেখকের চেয়ে ভাব ভাষা কল্পনার প্রখরতায় ব্যতিক্রমধর্মী। লেখক বাস্তব জীবনের টানাপোড়েনের সাথে যুক্ত করবার চেষ্টা করেছেন কল্পনার ধীশক্তি। প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতাকে ভিজিয়ে রেখেছেন অভিজ্ঞতার ইজেলে। “দহন দিনের কথা” উপন্যাস মধ্যবিত্ত সমাজের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের ইতিবৃত্ত। গতানুগতিকের দেয়াল ভেদ করে নতুন আঙ্গিকই উপন্যাসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। বাস্তবতার ক্যানভাসে চিত্রিত হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের ভাবাবেগের চিত্র। আলোচিত উপন্যাসটি বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার অসঙ্গতির বাস্তবিক উপস্থাপন বটে। আবহমান গ্রামবাংলার সলাজ বধূর করুন আর্তনাদের এক দালিলিক উপস্থাপন “দহন দিনের কথা”। সমাজের কুসংস্কার ভেঙেচুরে নারীবান্ধব সমাজ নির্মাণের পথপ্রদর্শক হিসেবে উপন্যাসটি কালের ইতিহাসে টিকে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। সহজ সরল প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা উপন্যাসটি পাঠক হৃদয়কে আন্দোলিত করবে। অবশ্যই উপন্যাসটি সুখপাঠ্য। আলোর বিচ্ছুরণকে পাশ কাটিয়ে উপন্যাসের পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে রাতের ভয়াল চিৎকার। মানবিক মূল্যবোধের নামাবলী গায়ে জড়িয়ে অমানবিক দৃশ্যপট অঙ্কিত করেছেন কথাসাহিত্যিক সাহিদা আক্তার। ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতাও রয়েছে উপন্যাসের আকর্ষণীয় দিক। এক নিঃশ্বাসে পাঠ করার মতো চমৎকার একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি পাঠকের হৃদয়কে আন্দোলিত করলে লেখকের শ্রম সার্থক হবে। পরিশেষে উপন্যাসের বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি। -প্রকাশক