ধর্মের নিরিখে দেশভাগ হলেও একই ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু ঘটি-বাঙাল এবং মুসলিম বাঙালি-অবাঙালি, বলতে গেলে আজও পর্যন্ত অন্তরের আত্মীয় হয়ে উঠতে পারেনি। উভয় দেশেই একদা দেশভাগচর্চায় ঝুঁকি ছিল। দেশভাগের পেছনে সাধারণ্যে অদৃশ্য এমন কিছু নির্মম সত্য, রূঢ় বাস্তবতা আছে যেগুলো সামনে টেনে আনলে নতুন করে আবার সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দেবার সম্ভাবনা ঘনীভূত হয়ে উঠতে পারে। সে কারণে দেশভাগ নিয়ে নিরপেক্ষ কিংবা নিরেট সৎ ও সত্য সাহিত্য সৃষ্টি হওয়া কঠিন, হয়ওনি বলে মনে করেন গবেষক-বিশ্লেষকরা। এই ভয় কিংবা সাবধানতা থেকেই কবি-লেখকরা দেশভাগ নিয়ে কবিতা-গল্প-উপন্যাস লিখতে গিয়ে কৌশলী ভূমিকা নিয়ে থাকেন, মধ্য কিংবা নরমপন্থা অবলম্বন করেন। সংকট যাতে ঘনীভূত না হয়ে উঠতে পারে কাহিনি সেইভাবে সাজিয়ে থাকেন। সমাপ্তিপর্বে এসে ঘটনা বা বিষয়বস্তুকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চাদরে মুড়ে দেবার চেষ্টা করেন। এই কারণে দেশভাগ বিষয়ক সাহিত্যে স্মৃতিমেদূরতা, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম, উদ্বাস্তুজীবনের দুর্দশা নির্মমতার কথা যতটা আছে, দেশভাগের চূড়ান্ত কারণ- সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা ও দাঙ্গাসংশ্লিষ্ট উৎপীড়নের কথা সেই তুলনায় খুব সামান্যই আছে, কোথাও কোথাও প্রায় নেই চললেও চলে। এই না-থাকাটা শান্তি ও সহাবস্থানের জন্য মঙ্গলজনক।
জন্ম ১৯৭৬, বাগেরহাট জেলার। রামপাল উপজেলার বড় সন্ন্যাসী গ্রামে। পিতা-অধ্যাপক দিলীপকুমার মণ্ডল, মাতা-শ্রীমতী অনিমা রানী। বিভূতিভূষণ মণ্ডল ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ। লেখার হাতেখড়ি অন্যান্য অনেকের মতােই কবিতা দিয়ে। পরবর্তীকালে মূলত: গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনায় আত্মনিয়ােগ। প্রকাশিত বই-গানের পথিক। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে তিনি ‘অদ্বৈত। মল্লবর্মণ উৎসব-২০০৭'-এ ‘নিম্নবর্গের সাহিত্য-পুরুষ অদ্বৈত মল্লবর্মণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কর্মজীবনে তিনি খুলনার শহীদ আবুল কাশেম ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক। তিনি লিটল ম্যাগ আন্দোলনের একজন কর্মীও।