‘সিনেমা বুলেভার্দ’ সত্যিকার অর্থেই সিনেমার সুবিস্তৃত ইতিহাসের পাতায় থাকা অসংখ্য ক্লাসিক সিনেমার মধ্য থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য ক্লাসিক সিনেমা ও সেগুলোর গ্রেট পরিচালকদের নিয়ে বয়ান করেছে। বাংলাদেশে সিনেমা নিয়ে যখন কেউ বই লিখতে যান, তখন অবশ্যম্ভাবীভাবে তারা বেশিরভাগই ফরাসি, রাশিয়ান (ইদানীংকালে, ইরানি) সিনেমা নিয়ে স্তুতি গাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেন। এখানে ফরাসি, রাশিয়ান, ইরানিয়ান সিনেমার মাহাত্ম্যকে খাটো করা হচ্ছে না কোনভাবেই। ইঙ্গিত করা হচ্ছে, অগ্রজ অনেকের চিন্তার এবং দৃষ্টিভঙ্গীর একমাত্রিকতা নিয়ে। তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোনই বোধকরি এই ‘শিল্পবিচার’কে প্রভাবিত করে থাকে। যেন হলিউডে শুধু ব্যবসা আছে, শিল্প নেই; কখনো ছিল না! অথচ ডি.ডব্লিউ.গ্রিফিথের ‘বার্থ অফ অ্যা ন্যাশন’ (১৯১৫) দিয়েই সিনেমা মাধ্যমটি তার নন্দনতত্ত্ব পায়। চ্যাপলিন, কিটনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া; প্রভাব সর্বকাল ধরে। ৪০ দশকের ‘ফিল্ম-নোয়া’ জনরা; ফরাসি নবতরঙ্গ, ইতালিয়ান নিও-রিয়ালিজম, চেক নবতরঙ্গ, সিনেমা ভেরিতে- আন্দোলনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। আর্কিটাইপ তৈরি করে দিয়েছে। হলিউডের যত ‘ওঁতর’ ফিল্মমেকার আছে, বেশিরভাগকেই আগে ফরাসিরা বিশেষায়িত করেছে ‘ওঁতর’ হিসেবে। এই জায়গাতেই 'সিনেমা বুলেভার্দ' ভিন্ন পথে হেঁটেছে। ১৯২০ দশকের সাইলেন্ট কমেডি সিনেমা থেকে শুরু করে ফিল্ম-নোয়া, রোমান্টিক সিনেমা, মেলোড্রামা, মিউজিক্যাল, গ্যাংস্টার, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, হরর, সায়েন্স-ফিকশন, ওয়েস্টার্ন ; সব জনরার এবং অরসন ওয়েলস, আলফ্রেড হিচকক, জন ফোর্ড, বাস্টার কিটন’দের মতো গ্রেট পরিচালকদের পাশাপাশি (যারা এই অঞ্চলে সুপরিচিত) কিং ভিডোর, আর্নেস্ট লুবিচ, জন কাসাভেটিস, হাওয়ার্ড হ্যকস, রাউল ওয়ালশ, ডন সিগ্যল, নিকোলাস রে, প্রেস্টন স্টার্জেস, স্টার্নবার্গ, জাঁক টুর্নার’দের মতো আরো ‘মাস্টার’ পরিচালকদের (এই অঞ্চলের সিনেফাইলরা সচরাচর যাদের নিয়ে বলে না) শ্রেষ্ঠ ক্লাসিক নিয়ে; সেগুলোর সমকালীন প্রভাব; নির্মাণের পেছনে জটিলতা; পর্যালোচনা; দর্শন নিয়ে আলোকপাত; স্টুডিও সিস্টেম নিয়ে টিপ্পনীর সামগ্রিকতায় ভরে উঠেছে প্রতিটি নিবন্ধ। বিবরণী, আলাপী, অন্তর্ভেদী গদ্যে।