ইট, পাথর আর কংক্রিটের অনন্ত স্তূপ, সেসবে যেন নির্বাক মানুষের মনের ভাস্কর্যময় ভাষা ফুল হয়ে ফুটে থাকে। আমাদের এই শহরের দেয়ালে। চারশ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে পৌঢ় নদীর মতো টিকে আছে, এক-একটি দেয়াল যেন গৃহপালিত সরীসৃপ। সময় যখন কেবলই আলোহীন, দূষিত হাওয়ায় নিশ্বাস নীল বিষে অসুস্থ আর কুয়াশার ঘন আস্তরে ঢাকা চারপাশ, তখন এই শহরের দেয়াল কথা বলে ওঠে। ফিসফিস স্বরে। কবি শুনতে পান সেই অস্ফুট কণ্ঠস্বর। সেসবই তুলে আনেন কবিতায়। মো. শাহাবুদ্দিন সাবুর কবিতা প্রচলিত নিয়ম মেনে লেখা নয়। শিল্পসৌন্দর্যের অমেয় কোনো রূপ খুঁজতে যাওয়া এখানে নিরর্থক। তবে মনের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ ও মানবিক দৃষ্টির অনাবিলতা এসব লেখায় রয়েছে। মনোবাসনার ওই ইচ্ছেগুলো তিনি সাজিয়েছেন কবিতার কাঠামোয়। কিন্তু এসব লেখায় পাওয়া যায় দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিস্থিতির জটিলতা থেকে মানুষের মুক্তির ব্যাকুলতা। পুরোনো ঢাকার জনজীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, আলো ও বাতাসের মতোই, বাংলার পাশাপাশি সোব্বাসী ভাষা। শাহাবুদ্দিন সাবু দুই ভাষাতেই লিখেছেন কবিতাগুলো। মনে রাখা দরকার, এর আগে তিনি সম্পাদনা করেছিলেন এই ভাষার অভিধান-বাংলা-ঢাকাইয়া সোব্বাসী ডিক্সেনারি [জানুয়ারি, ২০২১]। ফলে তাঁর এই কবিতার বইটি ওই কাজেরই ধারাবাহিকতার আরো একটি আন্তরিক দৃষ্টান্ত। পৃথিবী থেকে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে ভাষা। বিলুপ্তির বেদনাতুর আশঙ্কা থেকে মুক্তির উপায়ও হতে পারে বইটি।