নিঃশব্দ, চাপা শ্লেষ মৃদু আগুনের নীল শিখা যেন, আর উষ্ণ হৃদয়তাপিত অনুভবের মধ্যেও তীক্ষè হিমশীতল কথনভঙ্গি-মুক্তি মণ্ডলের কবিতা। পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তিতে খেলা করে রোদ, তা যেন রূপক। বিষাদ আর বিপন্নতার ভেতর সেসব টুকরো টুকরো ছবি উজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে স্নায়বিক সংবেদে। সম্প্রসারিত হয় ইন্দ্রিয়গুচ্ছ। সূর্যাস্তের দলিত আলো-এই অব্যর্থ শব্দশরসংক্রাম কতটা তীব্র, কতটা অস্তিত্ব ও প্রত্নজীবনের রক্তগুঁড়ো ছুঁয়ে যায়! যেন আমাদের অন্তর্গত হাড় ও স্নায়ু বিদ্যুচ্চমকের মতো চমকে ওঠে, অন্ধকারমথিত ধূসরতায় চাপা পড়া জীবনী-সমগ্রের দিকে চোখের লণ্ঠন উঁচিয়ে আলো জ্বালতে ইশারা দেয়। সেই অনিমেষ আগ্রহ মুক্তি মণ্ডলের কবিতায় উঠে আসে যাপনের সারল্যে আর প্রাণের অশেষ ঐশ্বর্যে। নেতিবাচকতার ক্ষত মুখ লুকায়; পরিণামে উদ্ভাসিত হয় জীবনের সৌন্দর্য, সম্ভাবনা, মনুষ্য মানবিকতার আমিষ। চকিতে, বাউলিয়ানার ঔদাস্য ভর করে তাঁর মগজে, শব্দের স্ফুটনাঙ্কে। তারপর, তাঁর মাথার ঘিলু ছিটকে পড়ে ক্ষুধার্ত নাগরিক বিড়ালের পায়ে। দলিত হয় মানুষের বাচ্চার উন্মাদ উত্তেজনায়। এভাবে; রূপে-রূপকে, অকথিত প্রেম ও ফলবাগান মেলান তিনি প্রান্ত ও কেন্দ্রের বিপুল ব্যাবধান। এভাবে; তিনি হয়ে ওঠেন কবিতার স্বাদেশিক, স্বঘোষিত প্রজাতান্ত্রিক; শব্দের স্বকীয়তায়, নিজের ডিকশনে। এই তবে, তাঁর কবিতা, স্বেদ-রক্তের আমূল বর্শাবিদ্ধ সহজ মানুষের ভাস্কর্য।