টি. এস. এলিয়ট বিংশশতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী কবি। ইংরেজি কবিতায় গদ্য-পদ্যের দ্বন্দ্বকে ভেঙে দিয়ে কথ্যরীতির প্রয়োগে নিয়ে এসেছিলেন একটি নতুন রীতি। এই রীতি সূচনায় তিনি তাঁর প্রবন্ধসমূহে তাঁরই কবিতার দর্শনভিত্তিকে স্পষ্ট করেছেন; বিশেষ করে ‘ট্রাডিশন অ্যান্ড ইনডিভিজুয়াল ট্যালেন্ট’ প্রবন্ধগ্রন্থে। এ গ্রন্থের মধ্যেই তাঁর নন্দনতত্ত্বের বীজ লুকিয়ে আছে। তবে প্রচল অর্থে নন্দনতত্ত্ব বলতে যে আনন্দ অনুভবের কথা বলা হয়, আস্বাদনের কথা বলা হয়; এলিয়ট তাঁর নন্দনচিন্তায় সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। কবিতার দর্শন নির্মাণে তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে তিনি নতুন পথে হাঁটতে শুরু করেন। তার পরিণতি পায় ‘দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড’ ও ‘ফোর কোয়ার্টেট’-এ। ‘টি. এস. এলিয়ট ও অন্যান্য’ শীর্ষক এই গ্রন্থে এলিয়টের নন্দনচিন্তার পাশাপাশি ‘ফোর কোয়ার্টেট’ কাব্যগ্রন্থ রচনার ভেতরকার বিনির্মাণ নিয়ে আলোকপাত হয়েছে; ‘দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড’ দীর্ঘ কবিতাটির শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য সৃষ্টিতে এজরা পাউন্ডের সম্পাদনা প্রসঙ্গ এবং বাংলা কবিতায় এলিয়টের ভূমিকা ও প্রভাব মূল্যায়নে আবুল হাসানের কবিতার সঙ্গে এলিয়টের কবিতার তুলনামূলক আলোচনা উঠে এসেছে। এলিয়ট প্রসঙ্গে চারটি প্রবন্ধের বাইরেও রবীন্দ্রনাথ ও ইয়েটস, কাহ্লিল জিবরান, অ্যালেন গিন্সবার্গ ও তাইওয়ানের আধুনিক কবিতার ইতিহাস ও পটভূমি নিয়ে পর্যালোচনা স্থান পেয়েছে এ গ্রন্থে। ফ্রান্সের লেখক ও চিন্তাবিদ রোলা বার্থ সমালোচনা সাহিত্য নিয়ে তাঁর যে নতুন রীতির কথা বয়ান করছেন, সে প্রসঙ্গও লেখক-গবেষক মাসুদুল হক এ গ্রন্থে তার পঠন-পাঠনে তুলে এনেছেন; যা অনুসন্ধানী পাঠকদের কৌতুহলের বিষয় হয়ে উঠেতে পারে।
তিনি ঢাকার জিন্দাবাহারে ৩রা জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ জন্ম গ্রহন করেন। পিতা জহিরুল হক ও মাতা ফরিদা আক্তার। শিক্ষা স্নাতকোত্তর (দর্শন) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; পিএইচডি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অভিসন্দর্ভ : নন্দনতত্ত্ব: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশের কবিতা (১৯৪৭-১৯৯০)। পেশায় সহকারী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর। গবেষণা-বৃত্তি : রিসার্স-ফেলো (১৯৯৭-২০০০), বাংলা একাডেমি। প্রকাশিত গ্রন্থ: কবিতা: টেনে যাচ্ছি কালের গুণ (১৯৮৭); অলৌকিক স্পশর্ (১৯৯০); ধাঁধাশীল ছায়া (২০০০); ধ্বনিময় পালক (২০০০); The Shadow of Illusion (২০০৫); জন্মান্ধের স্বপ্ন (২০১০); Blind Man`s Dream (২০১০); ছোটগল্প: তামাকবাড়ি (১৯৯৯); ঢুলকিপুরাণ (২০১০); আবার কাৎলাহার (২০১১), নাবিকের জুতো (২০১৩); উপন্যাস: দিনমুলুক (২০১৫); প্রবন্ধ-গবেষণা: বাংলাদেশের কবিতার নন্দনতত্ত্ব(২০০৮); হাজার বছরের বাংলা কবিতা (২০০৮); দিনাজপুরের লোকসংস্কৃতি: ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার (২০০৮); মুক্তিযুদ্ধ:দিনাজপুর(২০০৮); জীবনানন্দ দাশ ও অন্যান্য(২০১১); রবীন্দ্রনাথ: ছেলেবেলা (২০১২); অনুবাদ: ধূসর বুধবার (অনূদিত কাব্যগ্রন্থ, মূল: টি. এস. এলিয়ট,১৯৯৯); বালি ও ফেনা (অনূদিত কাব্যগ্রন্থ, মূল: কাহ্লিল জিবরান,২০০৮), হল্লা (অনূদিত কাব্যগ্রন্থ, মূল: এ্যালেন গিন্সবার্গ, ২০১৭); সম্পদিত গ্রন্থ: কবিতা সিরিজ (কবিতা-সংকলন, ১৯৮৮); এই সময় এই স্রোত (কবিতা-সংকলন, ১৯৯১); মৃত্যূত্তীর্ণ:ইয়াসমিন (প্রবন্ধ-সংকলন); সাক্ষাৎকার গ্রন্থ: সেলিনা হোসেন (২০০০); লিটল-ম্যাগ (সম্পা) : শ্রাবণের আড্ডা(১৯৮৭-২০০০)। প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টতা: সাধারণ সদস্য: বাংলা একাডেমি;: কার্যনির্বাহী সদস্য: খাজা নাজিমুদ্দিন মুসলিম হল ও লাইব্রেরি, দিনাজপুর (২০০১-২০০৩); সভাপতি: আমাদের থিয়েটার, দিনাজপুর, বিবেকানন্দ হিউমেন সোসাইটি, দিনাজপুর (১৯৯৬-১৯৯৭, ২০০১-২০০৬); বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, দিনাজপুর জেলা শাখা ( ২০১১-বর্তমান)। পুরস্কার: বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার (২০১১); চিহ্ন পুরস্কার (২০১৩); দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (লোকসংস্কৃতি) ২০১৪। স্ত্রী সিরাজাম মনিরা, দুই সন্তান হাসানুল হক সৌম্য ও মনীষা হক।