ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের রাজনীতির চার দশক-ষাট থেকে নব্বইয়ের রাজনীতির প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণী ‘সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন’। স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক ধারার- এ চার দশকের উত্তাল দিনগুলিতে অপসারিত হয়েছে অপশক্তি, মাথা উঁচু করতে শুরু করেছে গণতন্ত্র। অভ্যূদয় ঘটেছে গণতান্ত্রিক টেচতনার। আর এ সবই নিস্পন্ন হয়েছে- একের পর এক গণঅভ্যূত্থানে। তবুও গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি বিনাশ সম্ভব হয়নি। ইতিহাসের পাতায় লিখা রয়েছে এসব শাষক শোষক, নির্যাতক ও গণতন্ত্র হত্যাকারীর নাম ঠিকানা। এর সবটুকু বিবরণ হয়ত ইতিহাসের পাতায় নেই যেমনটা তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে। পাঠক পাঠ করতে করতে নিজেই জানতে পারবেন সেইসব অজ্ঞাত কাহিনী। ‘কোন ঐতিহাসিকের কলমে নয়’ বরং একজন সত্যানুসন্ধানী সাংবাদিকের কলামে উঠে এসেছে কাংখিত সেই কাংখিত সেই উপাখ্যান। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ঘটনার অন্তরালের চিত্র সম্পর্কে একজন প্রতিথযশা সাংবাদিক ঘটনার সাথে যুক্ত থেকে কিভাবে দেখেছেন তার বিবরণী ‘সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন’। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের উত্থানে সাংবাদিকতার যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তার বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আমাদের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে বর্তমান পর্যায়ে উন্নীত করার ক্ষেত্রে সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং দেশের আপামর জনগণের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল তার দলিল- এ বই।
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের দিনলিপি ভবিষ্যত প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহস ও শক্তি যোগাবে। এই বইয়ে সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ তুলে ধরেছেন সাংবাদিকদের সেইসব প্রয়াসের কথা-যা শৃংখলিত সাংবাদিকতাকে অর্গলমুক্ত করেছে। ঊনিশ শ’ নব্বইয়ে গণতন্ত্রের নবযাত্রায় সাংবাদিকদের কৃতিত্বপূর্ণ সাহসী ভূমিকার বিবরণ রয়েছে ‘সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন’-এ। সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতায় এই গ্রন্থ দিক নির্দেশনার কাজ করবে।
বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব রিয়াজ উদ্দিন। আহমেদ ১৯৪৫ সালে নরসিংদী জেলার মনােহরদী থানার নারান্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে অর্থনীতিতে এম.এ ও ১৯৭২ সালে এল এল বি পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যােগদানের পূর্বে জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ অবজারভারের চাকুরি ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে সহযােগিতা করেন। আবার অবজারভারে যােগদান করে ১৯৯০ সনের নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করেন। তারপর তিনি দৈনিক ডেইলী স্টার’-এ ডেপুটি এডিটর এবং ১৯৯১ সালে দৈনিক ‘দি টেলিগ্রাফের’ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি দেশের একমাত্র ফিন্যান্সিয়াল পত্রিকা। “দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক। তিনি বিদেশের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার সঙ্গেও জড়িত। জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সেক্রেটারী জেনারেল ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯২ সালের মে মাসে সার্কভুক্ত দেশসমূহের সাংবাদিক ফেডারেশন সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৫-১৯৯৮ সন এই চার বৎসর তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। চীনে তিনি দু'বার সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস প্রােগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। সাংবাদিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একুশে পদক, শেরে বাংলা পদক, মওলানা আকরাম খাঁ স্বর্ণপদক, নরসিংদী প্রেসক্লাব স্বর্ণপদক ও মাদক বিরােধী ফেডারেশন স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।