আমি একটা গাই। হ্যাঁ হ্যাঁ, গো প্রজাতির স্ত্রী শ্রেণিভুক্ত যে হাবাগোবা নিরীহ প্রাণীটির আপাদচিত্র চোখে ফুটে উঠেছে, আমি সেই গাই। অবশ্য মাহাত্ম্যের প্রসঙ্গটি কানে ধরে টেনে আনলে আমি ঢের আলোকপাতের বস্তু। আমার দুধ না হলে আপনাদের মনুষ্যপ্রজাতির জীবন নীরস, অচল। আমার চামড়া আর মাংসের প্রসঙ্গটি না হয় বাদই রাখলাম। মাহাত্ম্যের বিষয়াদি থাক। আমি যে গাই, সে বিষয়বস্তুই আলোচনায় উবু হোক। একটু ভেবে দেখুন আপনারা,মনে কল্পচিত্র বয়ে আনুন,ঘাসমাঠে বাঁধা আছি আমি, অথবা দড়িহীন ছাড়া অবস্থায় স্বাধীনই আছি - কী তাতে? কেউ কিন্তু সামান্যতম ভ্রুক্ষেপেও আনছেন না আমার অবস্থিতির বিষয়টি। বরং নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে এড়িয়ে বা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। মনেমনে তাচ্ছিল্যে উচ্চারণ করছেন, গা-ই দাঁড়িয়ে আছে! গা-ই! যদি গাই না হয়ে ষাঁড় হতাম, তবে কী করতেন? ভেবে দেখুন তো, কতটা ভয় সমীহে দুরুদুরু বুকে কম্পমান পায়ে দৌড়ে কিংবা দ্রুত হেঁটে অতিক্রম করে যেতেন - যেন বেঁচে গেলেন একপাক এক মহাফাঁড়া থেকে। আরো ভেবে দেখুন, ছেলেবেলার সেই খেলারমাঠের কথা। কেউ খেলায় খারাপ খেললে বলতেন, গাই কোনখানের, অথবা বলতেন, গাইমার্কা খেলা খেলেছিস। খুব বেশি খারাপ খেলে ফেললে রাগে ক্ষোভে বলতেন, শালার মররা গাই,পচা গাই কোনখানের! আবার বরাবরই খারাপ খেলে থাকে, এমন কোন দুর্বল খেলোয়াড় হঠাৎ কোন মুহূর্তে ভালো খেলে বসলে বলে উঠতেন, ও-রে বাপরে বা-প! এ দেখি গাইয়েও মাটি খুঁড়ে! অর্থাৎ শিঙ দিয়ে মাটিতো খুঁড়ে প্রবল প্রতাপশালী ষাঁড়। কাজেই দুর্বল গাইয়ের মাটি খোঁড়ার ঘটনা ঘটলে তা এভাবেই তাচ্ছিল্যে উচ্চারিত হবে। উচ্চারণ আপনারা করেনও আলবৎ সেভাবেই।
শওকত নূর লেখক পরিচিতি: শওকত নূর কথাসাহিত্যিক, কবি ও ছড়াকার। লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন দীর্ঘদিন। গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি পত্র পত্রিকায় লিখছেন নিয়মিত। আলােচিত উপন্যাস নিঃস্তব্ধ অন্ধকার’ এর মধ্য দিয়ে গ্রন্থে আত্মপ্রকাশ। অন্যান্য পাঠকপ্রিয় উপন্যাসের মধ্যে রাত্রি শেষে, নূপুর, তৃষ্ণার সাথে, স্বপ্ন দেখা ভাের, অপেক্ষমাণ, সেই শেষ দেখা, গােধূলির কথা, অশ্রু প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। গল্পগ্রন্থ বিতৃষ্ণা, শেষ কথা, ছায়া মানুষ, এক সন্ধ্যার ভালােবাসা, বন্ধু, নতুন জীবন, শুভরাত্রি প্রভৃতি সমধিক জনপ্রিয়। ছােটোদের জন্যও তিনি লিখে যাচ্ছেন নানা আঙ্গিকে। কিশােরগল্প পাগলা দাদার কাণ্ড, ভুলু মাস্টারের ভূতের স্কুল, ভূতের ডাক্তার, ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ, তিন উন্মাদের গল্প, রাখাল, বাঘা, টপু ও এক ঝক দেশি পেঁচা, ছড়াগ্রন্থ ডাবলু মামা ও হাবলু গামা, হুক্কাহুয়া, চাঁদের দেশে প্রভৃতি বহুলপঠিত। ‘ধূসর নীল সমুদ্রে’ গল্পগ্রন্থে তিনি হাজির হয়েছেন একগুচ্ছ অনন্য সাধারণ গল্প নিয়ে।। কথাসাহিত্যিক, কবি ও ছড়াকার শওকত নূর এর জন্ম টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার হাতিয়া গ্রামে। জন্ম তারিখ ৭ মার্চ ১৯৭০। তিনি পড়াশােনা করেছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে পেশা শিক্ষকতা ও লেখালেখি। কর্মস্থল রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ইনজিনিয়ারিং ইউনিভারসিটি স্কুল এন্ড কলেজ।